গণমাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আনন্দ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি বছর মে মাসে বন্ধ হওয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য আবার খুলছে। প্রথম ধাপে ১৮ হাজার শ্রমিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। ৪ অক্টোবর শুক্রবার ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে এসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা পুরো ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়েছি। আমাদের শ্রমিক দরকার। আর এসব শ্রমিক বাংলাদেশ কিংবা অন্য যেকোনো দেশেরই হোক না কেন, তাদের আধুনিক দাস হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। আমি এখনকার মতো করে এর আগেও প্রকাশ্যে একথা বলেছি।’ গত ৩০ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার আগে ফ্লাইট জটিলতার কারণে ১৮ হাজার কর্মী সেখানে কাজে যেতে পারেনি। আটকে পড়াদের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে নজর দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, সব শর্তপূরণ করা থাকলে এই কর্মীরা নতুন করে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বিদেশি কর্মীদের জন্য মানসম্মত কাজের পরিবেশ বজায় রাখার নিশ্চয়তা দিয়ে মালয়েশিয়ার নেতা বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে মালয়েশিয়ার কর্মী নেওয়া দরকার। কিন্তু তাঁরা যেতে হবে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কর্মীদের দাস হিসেবে গণ্য করা যাবে না। কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘বাংলাদেশে কিংবা মালয়েশিয়া কোথাও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেই করুক, কাউকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।’ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করার ওপর জোর দিচ্ছে। শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
উল্লেখ্য, এখন মালয়েশিয়ায় আনুমানিক ৮ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মরত আছে। এর মধ্য প্রায় সাড়ে ৪ লাখই ২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন। জানা যায়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম রাজনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ– এই তিনটি মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও নিয়েও আলোচনা হয়।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা উপভোগ করছে, কেননা বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মালয়েশিয়াসহ আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জনশক্তি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে। দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে কর্মক্ষম তরুণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা উপভোগ করছে। তাই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি জনশক্তি রপ্তানির আশা প্রকাশ করেন তাঁরা। বাংলাদেশ–মালয়েশিয়া সুদীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম, বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি, ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রসারসহ নানা বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা আশাবাদী।
প্রথম ধাপে মালয়েশিয়া ১৮ হাজার শ্রমিক নিয়োগ করলে জনশক্তি রফতানির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে–তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিদেশের শ্রমবাজারে যে ধস নেমেছে, তা পূরণ করতে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। সেগুলো হলো : আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদামাফিক আমাদের কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া; শ্রমশক্তির নতুন বাজার ও খাত খুঁজে বের করা এবং বিদেশে গিয়ে আমাদের শ্রমিকেরা যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে দূতাবাসগুলোর তদারকি জোরদার করা। তাঁরা বলছেন, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ যে সব দেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির চাহিদা বেশি, সেসব দেশে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলো দূর করা জরুরি।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের এই সফর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর ও আরো জোরদার করতে সহায়তা করবে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।