এখন পর্যটকে টইটম্বুর দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কঙবাজার। গতকাল শনিবার সরকারি ছুটির দিনে কক্সবাজার শহর সংলগ্ন সৈকতে বসে লাখো মানুষের মিলনমেলা। হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেকসহ শহরের বাইরের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও ছিল হাজার হাজার পর্যটকের ভিড়। হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ৪ মাসের মধ্যে গতকাল শনিবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে।
শনিবার সকাল ও দুপুরে কক্সবাজার শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটক সপরিবারে অথবা দলবেঁধে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরছেন। কেউবা আবহাওয়ার সতর্কতা সংকেত উপেক্ষা করে সাগরে নেমে গোসল করছেন। গতকাল কক্সবাজারে সপরিবারে বেড়াতে আসা চট্টগ্রামের বাকলিয়ার নাছির উদ্দিন বলেন, প্রথমদিন সমুদ্র সৈকত ও শহরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করেছি, খুবই ভালো লেগেছে। কক্সবাজার একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর। চট্টগ্রামের গোলপাহাড় এলাকা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা শামীম হামিদ বলেন, আমরা সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় ২ কিমি সৈকত পায়ে হেঁটে উপভোগ করেছি। ইনানীসহ শহরের আশেপাশের সমুদ্র সৈকতেও ঘুরেছি। চমৎকার আবহাওয়ার মাঝে এবারের ভ্রমণের অনুভূতি অতুলনীয়।
ঢাকার মীরপুর থেকে আসা পর্যটক ইকবাল হোসেন ও তানিয়া হোসেন বলেন, ট্রেনে চড়ে জীবনে প্রথমবার ঢাকা থেকে কঙবাজারে বেড়াতে এসেছি। বেড়াতে আসার আগে যতটুকু প্রত্যাশা ও ভাললাগার অনুভূতি কাজ করেছে, তার চেয়ে বেশি পেয়েছি সচক্ষে কঙবাজার সমুদ্র সৈকত দেখে।
গতকাল সকালের তুলনায় বিকেলে পর্যটকের ভিড় আরো বেড়ে যায়। সন্ধ্যায় যানবাহনের চাপে শহরের কলাতলী মোড় ও মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়কে দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়।
হোটেল মালিকরা জানান, গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউ জারির কারণে ২ মাস ধরে কঙবাজারের পর্যটন শিল্পে মন্দাকাল চলে। এরপর গত মাসের শেষার্ধ থেকে ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়তে থাকে। গত সপ্তাহের সরকারি ছুটির দিনের কঙবাজারের হোটেলগুলোতে প্রায় ৪০% কক্ষ বুকিং হলেও এবার বেশিরভাগ হোটেলেই শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে।
সাগরপাড়ের তারকাহোটেল কঙটুডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, সেনাবাহিনী নামার পর দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরছে। আর এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে কঙবাজারে।
কঙবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘ ২ মাস দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কঙবাজারের পর্যটন শিল্পে চরম মন্দাকাল গেছে। তবে গত সপ্তাহ থেকে হাজার হাজার পর্যটকের আনাগোনায় আবারও স্বরূপে ফিরেছে কঙবাজার। আর আজ (গতকাল) শনিবার সরকারি ছুটির দিনে কঙবাজারে লক্ষাধিক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। যেটি গত ৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কঙবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কঙবাজার হোটেল–মোটেল–গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, শুক্রবার কঙবাজারের হোটেলগুলোতে গড়ে ৯০ ভাগ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। আর শনিবার ৯৫ ভাগ থেকে শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বছর কঙবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছি।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে পিক সিজন এবং বর্ষাকালীন সময়কে অফ সিজন বা মন্দা মৌসুম হিসাবে ধরা হয়। এরপরও বর্ষাকালে সরকারি ছুটির দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার এবং অফিস খোলার দিনে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটক কঙবাজার ভ্রমণে আসেন। তবে প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কঙবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেল–মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কঙবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। এসব হোটেলে প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছে।