কাপ্তাই হ্রদে বাড়ছে মাছের উৎপাদন ও আহরণ

এক মাসে প্রায় ৪ কোটি টাকা শুল্ক আদায়

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | রবিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

আহরণ মৌসুম শুরুর দিকে কাপ্তাই হ্রদ থেকে কম মাছ আহরিত হলেও এবার হ্রদে মাছের উৎপাদন ও আহরণ ঊর্ধ্বমুখী। গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার শুরুর পর ক্রমাগত আহরণের পরিমাণ বাড়ছে। গেল মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমের প্রথম মাসেই মাছ অবতরণ ও বাজারজাতকরণ বেড়েছে। বিপণন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্যএ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের মাছ আহরণ ও উৎপাদন ঊর্ধ্বমুখী।

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ১ সেপ্টেম্বর কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরুর পর বিগত এক মাসজুড়ে প্রায় ১ হাজার ৯৪৩ মেট্রিক টন মাছ বিপণনকেন্দ্রের চারটি অবতরণঘাটে আনা হয়েছে। এর বিপরীতে শুল্ক আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। বিগত ২০২৩২৪ মৌসুমের প্রথম মাসে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ১ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করা হয়। তখন প্রথম মাসে অবতরণকৃত মাছ থেকে শুল্ক আদায় হয়েছিল ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। গেল আহরণ মৌসুমের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমের প্রথম মাসেই ১৭ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ ও ৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা শুল্কহার বা রাজস্ব বাড়তি আদায় হয়েছে।

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণণকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া আজাদীকে জানান, চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে আবহাওয়া ও কিছু সংকটের কারণে আমাদের বিপণনকেন্দ্রের পল্টুনগুলোতে মাছের অবতরণ ছিল তুলনামূলক কম। আমরা ওই সময়টাতে আশানুরূপ মাছ পাইনি। তবে এ বছর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে, যা অন্যান্য বছরে হয়নি। এটা মাছের বৃদ্ধির জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখছে। চলতি মৌসুমের প্রথম মাসে বিগত মৌসুমের প্রথম মাসের চেয়ে মাছ অবতরণ ও শুল্কহার আদায় দুটোই বেড়েছে। আমরা আশাবাদী এবার মৌসুমজুড়ে মাছ আহরণ করা যাবে এবং বিগত মৌসুমের চেয়ে এবার মাছ আহরণের পরিমাণ বাড়বে। বিএফডিসির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।

প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এ সময় হ্রদের মাছ বাজারজাতসহ স্থানীয় বরফকলগুলোও বন্ধ রাখা হয়। যদিও চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের ছয়দিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও হ্রদে পানি পর্যাপ্ত না বাড়ার ফলে প্রথম দফায় ১৫ দিন ও দ্বিতীয় দফায় ২৩ দিনসহ একমাস সাতদিন সময় বর্ধিত করা হয়।

সামপ্রতিক বছরগুলোয় তিন মাসের নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞার পরপরই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু করা যাচ্ছে না। গত বছরও কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের ১২ দিন আগেই বন্ধ করা হয় মাছ আহরণ। আবার তিন মাসের নির্ধারিত সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় দুই দফায় আরও এক মাস ১২ দিন বন্ধের সময় বর্ধিত করা হয়। চার মাস ১২ দিন মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাপ্তাই হ্রদে ফের মাছ আহরণ শুরু হয়। এবারো দুই দফায় এক মাস সাতদিন সময় বর্ধিত করে ১ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে হ্রদে মাছ আহরণ।

এদিকে, বিএফডিসির বিপণন কর্মকর্তা ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি ২০২৪২৫ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের শুরুর দিকে হ্রদে পর্যাপ্ত পরিমাণের চেয়েও বেশি (মাত্রাতিরিক্ত) পানি থাকায় কম মাছ ধরা পড়েছে। তবে হ্রদের পানি কিছুটা কমতে থাকায় মাছের আহরণের পরিমাণ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকার সুবাধে এবার মাছের উৎপাদন ও আহরণ বাড়বে বলেও জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ থেকে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) মাছ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার মেট্রিক টন এবং শুল্কহার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এরমধ্যে প্রথম মাসেই ২ হাজার মেট্রিক টনের কাছাকাছি মাছ আহরণ হয়েছে। বিএফডিসির হিসাবে, ২০২০২১ মৌসুমে ৬ হাজার ৭৯৪ মেট্রিক টন, ২০২১২২ মৌসুমে ৬ হাজার ৫২৩, ২০২২২৩ মৌসুমে হাজার ৫ হাজার ৪৯০ এবং সর্বশেষ ২০২৩২৪ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৭ হাজার ৬২৭ টন মাছ বাজারজাত হয়েছিল।

কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন ও বাজারজাত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যেই এ বছর আহরণ শুরুর প্রথম মাস কাটলো। শুরুর দিকে হ্রদে পানি বেশি থাকায় পুরো মৌসুমজুড়ে মাছ ধরার সম্ভাবনা আছে। আগের চেয়ে এখন মাছের বাজারজাতকরণ শৃঙ্খলার মধ্যে এসেছে। আগের সময়ে দেখা গেছে সারারাত মাছ বিএফডিসির পল্টুনে আনা হতো, এখন সন্ধ্যা ৬৭টার পর ল্যান্ডিং (অবতরণ) বন্ধ। এতে পরিবহন ও বাজারজাতকরণে শৃঙ্খলার পাশাপাশি মাছ নষ্ট ও অপচয় হচ্ছে। আমরা আশাবাদী এবার হ্রদের মাছের উৎপাদন কিছুটা হলেও বাড়বে। সব মিলিয়ে মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা ভালো আছেন।

প্রসঙ্গত, রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলা নিয়ে প্রায় ৭২৫ বর্গকিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদ বিস্তৃত। কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার ঘিরে প্রায় ২৭ হাজার জেলে নির্ভরশীল। কাপ্তাই হ্রদ থেকে আহরিত মাছ রাঙামাটির প্রধান বিপণনকেন্দ্রসহ জেলার কাপ্তাই, মারিশ্যা ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপকেন্দ্রে বাজারজাতকরণের জন্য অবতরণ করা হয়ে থাকে। এরপর শুল্কহার আদায় শেষে এসব মাছ বাজারজাত করা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকসাথে ৪ পয়েন্টে আগুন,এরপর বিস্ফোরণ
পরবর্তী নিবন্ধবাকলিয়ায় সাত ঝুট দোকানে অগ্নিকাণ্ড