মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে দেশের জ্বালানি তেল লাইটারিং কাজে নিয়োজিত দুইটি অয়েল ট্যাংকারই বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে অচল হয়ে পড়াকে বড় ধরনের নাশকতার লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে কোন চক্র বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দুইটি জাহাজকেই টার্গেট করেছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজ শনিবার সকালে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক। তিনি বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে এই নাশকতা চালানো হয়েছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
অবশ্য বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির কাছে ৯৬ টি স্যালো এবং কোস্টার ট্যামকার থাকায় জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ে সমস্যা হবে না। তবে নাশকতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে বলেও শংকা প্রকাশ করা হয়েছে।
গতরাত ১২ টা ৫০ মিনিটে ‘এমটি বাংলার সৌরভ’ জাহাজে আগুন লাগার পর আগ দিয়ে জাহাজটির পাশ থেকে একটি স্পিডবোট সরে যাওয়ার ঘটনা নাশকতার ব্যপারটিকে সামনে নিয়ে আসে।
সূত্র বলেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আনা আনা এই তেলের বেশিরভাগই বহির্নোঙর থেকে পতেঙ্গার গুপ্তাখালস্থ জেটিতে নিয়ে আসে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ ও ‘এমটি বাংলার সৌরভ’।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অচল হয়ে যায় বাংলার জ্যোতি। বাংলার জ্যোতিতে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। ওই ঘটনায় তিনজন নিহত হন।
গতরাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে পতেঙ্গার অদূরে বহির্নোঙরে অবস্থান করা বাংলার সৌরভে আগুন লাগে। জাহাজটি আজ সকালে তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের গুপ্তাখালস্থ ডলফিন জেটি -৭ এ ভিড়বার কথা ছিল। আগুনের ঘটনায় জাহাজ থেকে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়া একজন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তির নাম সাদেক মিয়া (৬০)। তিনি ওই জাহাজের জেনারেল স্টুয়ার্ট। তার বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানায়।
এর বাইরে ৪৭ ক্রু ও কর্মীকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। আজ সংবাদ সম্মেলনে বিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, বাংলার জ্যোতিতে আগুন লাগার পর নাশকতার কথা মাথায় রেখেই তদন্তকারীরা অগ্রসর হচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বাংলার সৌরভে ফায়ার ড্রিল করা হয়। এই জাহাজটিতে কোনো মেরামতের কাজও চলছিল না।
তিনি জানান, গতরাতে হঠাৎ জাহাজের সামনের দিকে প্রায় একই সঙ্গে চারটি জায়গায় স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ক্রুরা। সেসময় জাহাজের কাছ থেকে একটি স্পিডবোট সরে যেতে দেখা যায় বলেও জানান তারা। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য এই নাশকতা হতে পারে।
ঘটনার ব্যাপারে বিপিসি এবং বিএসি পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন যে, এমটি বাংলার সৌরভ জাহাজের ঘটনা পরিবেশ এবং জীববৈচিত্রে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।