প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে বুনিয়াদী শিক্ষা। প্রাথমিক স্তরে যদি কোনো শিশুর ভিত্তিকে মজবুত করা না যায় তাহলে ঐ শিশুকে মানবসম্পদে রূপান্তর করা দুরূহ ব্যাপার। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তর শেষেও বাংলা সাবলীলভাবে পড়তে পারে না। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিশুকে ‘স্বাধীন পাঠক’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। আর স্বাধীন পাঠক তৈরি করতে হলে প্রয়োজন কিছু কলা কৌশল। এক্ষেত্রে প্রাক– প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত একজন শিক্ষককে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া নিশ্চিত করা। সব বর্ণ, চিহ্ন চিনতে হলে শিশুকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। এজন্য অভিভাবকের কঠোর পাঠানুশীলনের দরকার নেই। প্রয়োজন তার সচেতন মানসিকতা। শিক্ষক তার সবটুকু প্রচেষ্টা শিশুদের জন্য নিবেদন করেন। কিন্তু তাতেও দেখা যায় পারিবারিক অসচেতনতার কারণে শিশুদের সাবলীল পাঠক হিসেবে ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠে। এখানে ‘স্বাধীন পাঠক’ বলতে শিক্ষার্থীদের সাবলীল বাংলা পড়তে পারাকে বোঝানো হচ্ছে। প্রাথমিক শ্রেণিতে শিশু ‘স্বাধীন পাঠক’ হিসেবে আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে পরিবার কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে, তা বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরিবারের ভূমিকা প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি যতটুকু জানি তার সবটুকু দিয়েই শিশুদের পঠন দক্ষতা অর্জন করাতে সক্ষম হই। একটি শিশুর ধ্বনি সচেতনতা থেকেই অক্ষর জ্ঞানে পারদর্শি হয়ে উঠে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধারাবাহিকভাবে যদি শিশুদের এই শিখনফলগুলো অর্জন করানো সম্ভব হয় তবেই শিশু তৃতীয় শ্রেণিতে নিজেকে ৮০ শতাংশ স্বাধীন পাঠক হিসেবে সফল ভাবতে পারবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও আনন্দ লাগবে পাঠদান করিয়ে। আমি বাস্তবে উপলব্ধি করি বর্তমান চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুটি কয়েকজন সাবলীলভাবে পড়তে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষকের সহায়তা ছাড়া সে কোনোভাবেই পাঠাংশটুকু একাকী পড়তে পারছে না। আচ্ছা ভাবুন তো শিক্ষক হিসেবে তখন আপনার নিজেকে কতটা ব্যর্থ মনে হয়। অন্যদের কথা আমি জানি না, তবে আমার নিজেকে যথেষ্ট অপারগ মনে হয়। মনে হয় আমি বোধহয় সঠিক কৌশল অবলম্বন করে পড়াতে পারি না। তখন আমার মাথায় আসে এদের মধ্যে যে ঘাটতি রয়ে গেছে তা যদি পূরণ করা না যায় তাহলে সে কখনও সাবলীল পাঠক হয়ে উঠবে না। এবার যত চেষ্টাই করি না কেন তার এই ঘাটতি পূরণ করতে আরো চ্যালেঞ্জিং এর ব্যাপার হয়ে উঠে। সুতরাং আমার ভাবনা মতে প্রাক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এই শিশুগুলো যেহেতু আমাদের হাতের কাছে তাই চেষ্টা তো আমাদের চালাতেই হবে। যেভাবেই হোক দ্বিতীয় শ্রেণিতেই শিক্ষার্থীদের বাক্য পড়ার অনুশীলন করাতে হবে। তবেই প্রতিটি শিক্ষার্থী সাবলীল পাঠক হিসেবে পরিপূর্ণতা অর্জন করবে।