পোকার আক্রমণে বিবর্ণ দুই হাজার একর প্যারাবন

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | শনিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালীকে সুরক্ষিত রাখতে বন বিভাগের সৃজিত ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের বাইন বাগানে দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। মথ জাতীয় এই পোকার আক্রমণে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর প্রায় দুই হাজার একরের মতো বিশাল প্যারাবন বিবর্ণ হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে কীটনাশক প্রয়োগ কিংবা অন্য কোন ব্যবস্থা না নিলে এ রোগ আরো বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। গতকাল শুক্রবার মহেশখালী জেটিঘাট এলাকায় উপকূলীয় বন বিভাগের সৃজিত প্যারাবন সরজমিনে দেখতে গিয়ে সবুজ বেষ্টনীর বিবর্ণ দৃশ্য দেখা গেছে।

এলাকাবাসীদের সাথে আলাপে জানা যায়, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে প্যারাবনে পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এতে বাইন গাছের পাতা ও ডালপালা শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে অন্তত দুই হাজার একর প্যারাবন শুকিয়ে ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষাকারী এই উদ্ভিদটি। উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালী উপকূলের গোরকঘাটা, চরপাড়া, মহেশখালী জেটিসংলগ্ন এলাকা, বড়দিয়া, পোকখালী, ঘটিভাঙা, কালারমারছড়ার ঝাপুয়া ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নে প্রায় ১৭ হাজার একর বাইনগাছের সৃজিত প্যারাবন রয়েছে। এসব প্যারাবনের বেশ কয়েকটি স্থানে গত এক সপ্তাহ ধরে বাইন গাছে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত বনভূমির আয়তন আনুমানিক দুই হাজার একর হতে পারে। মহেশখালী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জেএইচএম ইউনুচ বলেন, প্যারাবনে পোকার আক্রমণের খবর পেয়ে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাই, বাইনগাছের পাতায় ও কচি ডালে অসংখ্য কালো রঙের ছোট ছোট পোকা। পোকাগুলো পাতা খেয়ে নিঃস্ব করে দিচ্ছে একের পর এক গাছ। অক্ষত রাখেনি কোন গাছের একটা পাতাও। যার কারণে মরে যাচ্ছে গাছগুলো। পর্যটকদের মন আকৃষ্টকারী সৌন্দর্যের প্রতীক এই প্যারাবন রক্ষায় এগিয়ে আসছে না কেউ। দেখেও কী করবে বুঝতে পারছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই প্যারাবন উজাড় হয়ে সৌন্দর্য হারাবে মহেশখালী জেটি।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্যারাবনে পোকা আক্রমণের বিষয়টি সরজমিনে পরিদর্শন করতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন ও সহকারী বন সংরক্ষক শেখ আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি দল গত শনিবার মহেশখালীতে এসেছিলেন। তারা মহেশখালী জেটিঘাট, আদিনাথ জেটি ও পোকখালী এলাকায় সৃজিত প্যারাবনে ঘুরে দেখেন।

মহেশখালীর উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটার রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে প্যারাবনে পোকার আক্রমণ হচ্ছে। এতে ১৭ হাজার একর প্যারাবনের মধ্যে অন্তত ২ হাজার একর সৃজিত প্যারাবন বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতি দুই তিন বছর পরপর প্যারাবনে পোকার আক্রমণ হয়। এবারের মতো প্যারাবনে পোকার আক্রমণ মহামারী আকার ধারণ করেনি। আক্রান্ত বাগানে আবার নতুন পাতা গজাবে। তাই পোকার আক্রমণে প্যারাবনের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হবে না।

জানতে চাইলে ডিএফও বেলায়েত হোসেন বলেন, গত শনিবার প্যারাবন দেখতে গিয়েছিলাম। প্যারাবনে পোকার আক্রমণের দৃশ্য চোখে পড়েছে। কিন্তু এতে প্যারাবনের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। পোকার আক্রমণে বাগান মরে যাচ্ছে মনে হলেও আসলে তা হচ্ছে না। বৃষ্টি হলে আবার প্যারাবনে নতুন করে পাতা গজাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাড়ে ৯ লাখ ভোটার এখনো স্মার্ট কার্ড পাননি
পরবর্তী নিবন্ধহিযবুত তাহরীরের ইমতিয়াজ সেলিম ৩ দিনের রিমান্ডে