দেশে বিমান চালানোর অপরিহার্য জ্বালানি জেট ফুয়েলের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। মাত্র মাসখানেকের চাহিদা মেটানোর মতো জেট ফুয়েল রয়েছে দেশে এবং পাইপলাইনে। নতুন করে জেট ফুয়েল আমদানির কোনো সিডিউল গতকাল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট যুদ্ধাবস্থায় ফুয়েল আমদানি নেটওয়ার্ক বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশে দিন দিন জেট ফুয়েলের চাহিদা বাড়লেও মজুদের সক্ষমতা না বাড়ানোর ফলে সংকটের শঙ্কাও প্রকট হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বিপিসি বিদেশ থেকে জেট ফুয়েল আমদানি করে পদ্মা অয়েল কোম্পানির মাধ্যমে বিপণন করে থাকে। শুধু দেশীয় ফ্লাইট অপারেটরই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিমানগুলোও বাংলাদেশ থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানে জ্বালানি তেল দেয়ার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকেও জ্বালানি তেল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বছর দুয়েক আগেও দেশে প্রতিদিন ৮শ’ থেকে ৯শ’ টন জেট ফুয়েলের চাহিদা ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে তা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রতিদিন দেড় হাজার টন জেট ফুয়েলের চাহিদা রয়েছে।
চাহিদা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছিতে গিয়ে ঠেকলেও জেট ফুয়েল সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা বাড়েনি। দেশে বর্তমানে পতেঙ্গাস্থ প্রধান ডিপোতে ৩৬ হাজার ৭৭১টন, নারায়ণগঞ্জের গুদনাইল ডিপোতে ১০ হাজার ৯৩৯ টন, ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭ হাজার ১৩১টন, চট্টগ্রাম হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৮৩৬ টন, সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৮৪৯ টন এবং কঙবাজার বিমানবন্দরে ৮৯ টন মিলে সর্বমোট ৫৬ হাজার ৬১৫ টন জেট ফুয়েল সংরক্ষণ করার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন দেড় হাজার টন করে ব্যবহার হলে দেশে মাত্র ৩৭ দিনের জেট ফুয়েল সংরক্ষণ করা যায়।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সারাদেশে ২৩ হাজার ৮২ টন জেট ফুয়েলের মজুদ ছিল। যা দিয়ে দেশের মাত্র ১৫দিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙরে ২২ হাজার টন জেট ফুয়েল নিয়ে একটি জাহাজ অবস্থান করছে। সাগর উত্তাল থাকায় এই তেল খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। খালাস করা হলে দেশে যে পরিমাণ জেট ফুয়েলের মজুদ গড়ে উঠবে তা দিয়ে মাস খানেকের চাহিদা মেটানো যাবে। কিন্তু নতুন করে আর তেল আমদানির কোনো সিডিউল দেয়া হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জেট ফুয়েল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করলেও বেশ সময় লাগে বলে জানা গেছে।
এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের যে দামামা শুরু হয়েছে তাতে জেট ফুয়েল আমদানি এবং সরবরাহ নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক রাখা কঠিন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দেশে জেট ফুয়েল মজুদের সক্ষমতা বাড়ানো হলে এই ধরনের শংকা তৈরি হতো না। দেশে যদি অন্তত দুই মাস চালানোর মতো জেট ফুয়েল মজুদের সক্ষমতা গড়ে তোলা যায় তাহলে এক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত হতো বলেও তিনি মন্তব্য করেন।