পর্যটকদের নির্দেশনা মানাতে প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ

পাঁচ বছরে ১৫ মৃত্যু

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি ঝরনা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খৈয়াছড়া, বোয়ালিয়া, রূপসী, নাপিত্তাছড়া, সোনাইছড়ি ও মহামায়া লেকের ঝরনা দেখতে আসে হাজারো পর্যটক। ঝরনাগুলোর নান্দনিক সুন্দর দেখতে এসে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে পর্যটকেরা। নানা অসতর্কতা ও সাঁতার না জানায় কূপে তলিয়ে ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ।

গত পাঁচ বছরে এসব ঝরনায় ১৫ জন পর্যটক প্রাণ হারান। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এছাড়া গাইড ছাড়া বিভিন্ন ঝরনায় যাওয়ার সময় পথ হারিয়ে গভীর জঙ্গলে চলে যাওয়া শতাধিক পর্যটককে উদ্ধার করেছে জোরারগঞ্জ ও মীরসরাই থানা পুলিশসহ ফায়ার সার্ভিসের টিম। বন বিভাগ ও ইজারাদারের দাবিঝরনায় আসা পর্যটকদের জন্য নির্দেশনা দেয়া হলেও তা তারা মানছেন না। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি বন বিভাগ বিভিন্নভাবে সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও ঝরনা এলাকাগুলোতে বাস্তবে নেই সঠিক ব্যবস্থাপনা। রুপসি ঝরনাতেও গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে আসা ২ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। খৈয়াছরা ঝরনাতে বেড়াতে গিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ও ৫ সেপ্টেম্বর দুজন নিহত হয়। ১৬ আগস্ট একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে গত ৫ বছরে ১৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ পাথর পড়ে মাহবুব হাসান নামে একজনের মৃত্যুর পর বনবিভাগ এক সপ্তাহ ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পাথরগুলো অপসারণ করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, অধিকাংশ পর্যটক আসেন সমতল থেকে। তাদের পাহাড় ও ঝরনার নিচের কূপের গভীরতা সম্পর্কে ধারণা থাকে না। তাই না জেনে পর্যটকরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন। ঝরনায় আসা সবাইকে আগে থেকে ধারণা নেয়া উচিত।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের অধীনে ঝরনাগুলো ইজারা দেয় বন বিভাগ। ওই বছর ১২ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়। ২০২৩ সালে ২৯ লাখ টাকায় ইজারা নেয় এএইচ এন্টারপ্রাইজ। চলতি বছর ৩০ লাখ টাকায় ইজারা নেন সমোসন এন্টারপ্রাইজ। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা জোরদার হয়নি।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বারৈয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, পর্যটকদের টিকিট দেয়ার সময় বিপদজ্জনক স্থানগুলোতে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া বন বিভাগ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না যেতে ঝরনা পথে ফেস্টুন দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়চার বলেন, বৃষ্টিপাতের সময় ও বৃষ্টির পরপরই ঝরনা এলাকায় না যাওয়া উত্তম। এ সময় পাথরগুলো পিচ্ছিল থাকে। সাঁতার জানা না থাকলে ঝরনার কোমর পানিতেও নামা নিষেধ। ঝরনার ঝুঁকিপূর্ণ উপরের স্তরগুলোতে উঠা নিষেধ। নির্দেশনাগুলোর বিষয়ে বন বিভাগ আগামীতে কঠোর পদক্ষেপ নিবে বলেও জানান তিনি।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমি বন বিভাগকে বার বার সতর্ক করেছি। এমন প্রাণঘাতি দুর্ঘটনাগুলো খুবই উদ্বেগজনক। বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আরো কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধড্রোন তৈরি হবে মীরসরাইয়ে
পরবর্তী নিবন্ধচার ঘণ্টায় একই স্থানে তিন দুর্ঘটনা, আহত ৩