নতুন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম

ডেইজী মউদুদ | শনিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সেপ্টেম্বরের বার তারিখে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন ফরিদা খানম। জেলা প্রশাসনের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আমরা পেয়েছি একজন নারীকে, যিনি এই গুরুদায়িত্ব পালনে প্রশাসন কর্তৃক মনোনীত হয়ে এসেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মেধাবী শিক্ষার্থী ২০০২ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করে ২৫তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মজীবনের সূচনা করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদান করেন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের এতবড় দায়িত্ব পাওয়ার পরে তাঁর অনুভূতি, চিন্তাধারা, কর্মপরিকল্পনা এবং নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নানা সমস্যা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে সেদিন তাঁর মুখোমুখি হয়েছিলাম।

জেলা প্রশসনের সূচনা ১৭৭২ সালে। ব্রিটিশ নাগরিক মি. বেন্টেলি ছিলেন প্রথম ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর। ব্রিটিশ আমল পার করে পাকিস্তান আমল এরপরে বাংলাদেশ হয়েছে ৫২ বছর প্রায়। এই সুদীর্ঘ সময়ে অনেক জেলা প্রশাসক এসেছেনগেছেন, কিন্তু এই পর্যন্ত কোনো নারী জেলা প্রশাসক আমরা পাইনি। আমি বেশ কিছুকাল আগে অপরাজিতা সিলেকশন কমিটির মিটিংএ গিয়ে পেয়েছিলাম, তৎকালীন এডিসি ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজীকে। তিনি সেদিন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমি তাঁর তাৎক্ষণিক অনুভূতি নিয়ে লিখেছিলাম, কবে আমরা নগরে একজন নারী জেলা প্রশাসক পাবো? আজ সেই আশা সফল হয়েছে। তিবরিজী ও বান্দরবানের ডিসির দায়িত্ব পালন করে এখন নগরে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসাবে কর্মরত আছেন। আর নগরবাসী পেল একজন নারী জেলা প্রশাসক। সুপ্রিয় পাঠক, আজ আপনাদেরকে তাঁরই সাফল্যগাথা শোনাবো। নগরীতে প্রথমবারের মতো জেলা প্রশাসক নিযুক্ত হয়ে তিনি ইতিহাসের অংশ হয়েই থাকবেন। তাঁর মিশন, ভিশন এবং কর্মপরিকল্পনা থাকবে আজকের লেখনিতে। তবে জেলা প্রশাসক বা ডিসির গুরুত্ব আমি একেবারে ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি। ১৯৬৭/৬৮ সালে আমার পিতা তোফায়েল আহমেদ গহিরা স্কুলকে কলেজে পরিণত করার সময়ে সদা জেলা প্রশাসক বা ডিসির শরণাপন্ন হতেন। তাঁর পারমিশন বা সিদ্ধান্ত নিয়েই চলতেন। আমার যতদূর মনে পড়ে, সে সময়ে ডিসি ছিলেন সালাউদ্দীন সাহেব। আমি উনাকে আমাদের বাসায় দেখেছি। একটু একটু মনে আছে। তবে বুঝতাম তিনি বড় একজন কর্মকর্তা। সেই থেকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি একটি গভীর শ্রদ্ধাবোধ আমার চেতনায় লালন করা ছিল। বড় হয়ে সেই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যখন নিবিড় সান্নিধ্য পাই, আনন্দের সীমা থাকে না।

বিকাল ৪ টা। স্থান কোর্ট বিল্ডিংস্থ জেলা প্রশাসনের কার্যালয়। সেদিন সকালে এই এলাকায় পা ফেলা দায় নানা শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায়। আমি তাই বিকালটাকে বেছে নিয়েছিলাম। কোর্টবিল্ডিং চত্বরে ভিড়ভাট্টা নেই ঠিক আছে, কিন্তু ডিসি কার্যালয়ে রকমারি মানুষের লাইন। কাজের পর কাজ সারছেন তিনি। এদিকে সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা! একসময় মানুষের মেলা কমেছে, কিন্তু একগাদা ফাইল। একটির পর একটিতে সই করছিলেন। এরই ফাঁকে আমি তাঁর সাথে আলাপচারিতায় মেতে উঠি। প্রথমেই স্বাগত জানিয়ে জানতে চাইলাম, নগরে প্রথম নারী ডিসি হিসাবে কাজ করতে এসে, কেমন লাগছে? তিনি বলেন, অবশ্যই ভালো লাগছে। সরকার আমাকে এই বড় একটি দায়িত্ব দিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের কাজ হলো জনসেবার কাজ।

আর চট্টগ্রাম যেহেতু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা, এখানে কাজের ক্ষেত্র আর পরিধি বিশাল, আছে অনেক কাজ করার সুযোগ। সুযোগের পাশাপাশি রয়েছে ঝুঁকি আর চ্যলেঞ্জ। একজন নারী হিসাবে সেই চ্যলেঞ্জ আরো বেশি। তবে সততা, সাহস আর মনোবল থাকলে যে কোনো চ্যলেঞ্জ মোকাবেলা করা যায় বলে আমি বিশ্বাস করি। নগরীর জনসেবামূলক কিছু কর্মকাণ্ড আমরা বিগত প্রশাসককে কার্যকর করতে দেখেছি। এই সব প্রকল্পের অনেক কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথমে অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করবো। পরে আর কি কি সেবামূলক প্রকল্প হাতে নেয়া যায়, তা চিন্তা করবো। প্রশ্ন রেখেছিলাম, নগরীর শিশুপার্ক উচ্ছেদ করে সেখানে মনুমেন্ট নির্মাণের বিষয়টি নিয়েও। খেলার মাঠ নির্মাণ, ডিসি পার্ক, পর্যটন বাসসহ নানাবিধ প্রকল্প নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথমেই যতগুলি অসম্পূর্ণ কাজ আছে, পর্যায়ক্রমে সেগুলো শেষ করার চেষ্টা করবো। পরে জনগণের সেবামূলক আর কি কি কাজ হাতে নেয়া যায়, তা খতিয়ে দেখবো।

জনগণ এখানে এসে জনসেবা পায় না, সেবার পরিবর্তে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হয় বিশেষ করে ভূমি অফিসে। সেই সেক্টরটির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথমে এসেই ভূমি পরিষেবার কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি। এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রশ্নে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলেছি। অভিযোগ পেলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। প্রয়োজনে বিষয়টি মাসিক উন্নয়ন সভায় আলোচনা করে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবো। নগরীর ও নগরীর অন্তর্ভুক্ত সরকারি অফিসগুলোতে সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী সেবা প্রদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। প্রতিটি সরকারি অফিসে এই নীতি অনুসরণের কথা রয়েছে। যদি এই সিস্টেম মেনে চলা না হয়, সেই বিষয়ে আমার নজরদারি থাকবে। জেলা প্রশাসনে কাজের শেষ নেই। সরকারি যাবতীয় অধিদপ্তরগুলো জেলা প্রশাসনের কাজের আওতায়। জেলার সব উপজেলাগুলোও জেলার আয়ত্ত্বাধীন। আবার কোন পর্যায়ে কি কি জনসেবা রয়েছে, বেশিরভাগ জনগণ জানেনও না। আমরা আশা করবো এই নারীর গতিশীল ও সাহসী নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের যে কোনো সেবার কাজে সেবাগ্রহীতারা সেবা পাবেন। সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় নগরীর এই বিশাল সেবামূলক প্রতিষ্ঠানেও কমবে জন হয়রানি আর দুর্ভোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ব হার্ট দিবসে সিএসসিআর কার্ডিয়াকের সেমিনার
পরবর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানি আলোকচিত্রী ফাতিমা হুসাইনি: বসন্তের চোখ