চট্টগ্রাম প্রকৃতির ভূস্বর্গ মৃণালিনী চক্রবর্তী

| বৃহস্পতিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২৪ at ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ভূগোলে চট্টগ্রাম শক্তি সাহস মেধা মননের এক ঐতিহাসিক স্থান। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম। প্রকৃতির অকৃপণ সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম। পাহাড় নদী সাগর হ্রদ দ্বীপ বনভূমির সবুজ বেষ্টনী বন্ধনে মায়াজাল পাতানো বীর চট্টলা। কবি শিল্পী সাহিত্য সংস্কৃতির সৃষ্টি সম্ভারে চট্টগ্রাম একটি অনন্য দৃষ্টান্তকারী অঞ্চল। চট্টগ্রাম পর্যটনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উৎকৃষ্টতম মাইলফলক একটি অঞ্চল। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম মিলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাহাড় সাগর বন নদী লেকের আভরণে অভূতপূর্ব সৌন্দর্যের বরপুত্র চট্টগ্রাম। জনপ্রকৃতিতে ও পাহাড়ী বাঙালির নিবিড় বন্ধনের, সংস্কৃতির পরিমণ্ডলের কারুতায় বাংলাদেশের এক অনন্য রূপের সাক্ষী চট্টগ্রাম।

সারা চট্টগ্রামের প্রতিটা প্রান্তর, উপজেলা, পর্যটনের ক্ষেত্রভূমি। এখানে নানান জাতিউপজাতির নিজস্বতায় গড়ে উঠেছে আঞ্চলিক ভাষা, সংস্কৃতির, উৎসব, আচার আচরণ, পোশাক, অলংকারাদি, অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের এক বৈচিত্র্যময় রূপচিত্র। বাংলার পর্যটন শিল্পের সম্ভারে, বাংলার ভূস্বর্গ চট্টগ্রামকে অভিহিত করলে অত্যুক্তি হবে না। দেশের উন্নয়নে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম অকুতোভয় সিদ্ধহস্ত। এই শক্তি লালনে একনিষ্ঠ বলিষ্ঠ পদক্ষেপে বাংলাদেশ শীর্ষে দাঁড়িয়ে যেতে পারে নিশ্চিত। তার সাথে বাস্তবভাবে যুক্ত যদি হতে পারে স্বচ্ছ উন্নয়ন ধারা। পর্যটন শিল্পের সঠিক ব্যবহারে বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমরাও গর্বিত চিত্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। আনন্দে দৃষ্টান্তে প্রতিফলিত রূপে।

বাংলাদেশের মানুষ এখন এই চায়। স্বাধীন রাষ্ট্রে গর্বের সাথে শিল্পসন্ধানে শ্রম ও কর্মবিনিয়োগে গর্বিত হতে চায়। চট্টগ্রামের উত্তর দক্ষিণে শুভপুর থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত পূর্ব পশ্চিমে সন্দ্বীপ থেকে সাজেক পর্যন্ত প্রতিটা গ্রাম শহর উপশহর উপজেলা পর্যটনের তীর্থভূমি চট্টগ্রাম। ধরতে গেলে কোন একটা অঞ্চলকে বাদ দেওয়া যায় না। ধর্মীয় সংস্কৃতি, শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি, আঞ্চলিক সংস্কৃতি, বাঙালি ও উপজাতি সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র চট্টগ্রাম। শুধু উন্নয়ন, চর্চার, মানের ক্ষেত্র রচনার উপসর্গের প্রয়োজন। বিধাতা চট্টগ্রামকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে দিয়েছেন। শুধু মানুষ তার উপযোগী করে গড়ে তোলার উপাত্ত ও মননপ্রক্রিয়া অর্জনের জন্য প্রধানের প্রেরণা শক্তি সাহস অর্থ শিক্ষা বিজ্ঞান প্রযুক্তির উপকরণ প্রয়োজন। এবং বিশ্বমাঝে পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের উত্তম স্থান এখান থেকেই হতে পারে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী থেকে সাগর, সৈকতে সৈকতে ঢেউয়ের দোলায় স্নানের মিতালী খেলা, পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজ অরণ্যে লতার দোলনায় দোল খাওয়া, কবি জসীমউদ্দীনের ভাষার মত মুঠি মুঠি সীম শুধু নয় মুঠোয় মুঠোয় ফলের রাজ্যে ঢোকা, নির্জন পাহাড়ের কান্নায় ঝরা যেন ঝর্নাধারার গান শোনা যায়, পাহাড়ের তৈরি লেকে লেকে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে নৌকাবিলাস করা যায়, এখানে আছে কৃষিজ, বনজ, ফলদ সম্পদের সমাহার। এখানে আছে চিত্রকর, নাট্য, সঙ্গীত, নৃত্য, সাহিত্য, কবি, লেখকের, অনবদ্য সৃষ্টির অপূর্ব রূপচিত্র, কবিতায় নাট্যময়তায় সুরের অপূর্ব ঝংকারের বৈচিত্র্য। চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম মিলে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানে ছত্রিশ টি গোত্রের উপজাতি তার সাথে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান নানা ধর্মের এক ঐক্য ক্ষেত্র চট্টগ্রাম। তাছাড়া মাইজভাণ্ডারী, বার আউলিয়া, দরগাহ শরীফের তীর্থক্ষেত্র। আদিনাথ, চন্দ্রনাথ, মেধসমুনির আশ্রম, পুণ্ডুরীকধামের তীর্থক্ষেত্র। বৌদ্ধ বিহারের তীর্থক্ষেত্র। গির্জার তীর্থক্ষেত্র এই চট্টগ্রামে ভাব ভক্তি পূর্ণতায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে, স্বাধীনতা আন্দোলনে এই চট্টগ্রাম ইতিহাসে ঐতিহাসিক রূপরেখা টেনেছে। স্বাধীন বাংলার ঘোষণা ও বেতার কেন্দ্র এই চট্টগ্রামে। আর চট্টগ্রামের বুকে জন্ম নেয়া দৈনিক আজাদীতে গাঁথা আছে এই সব ঐতিহ্য ইতিহাসের রূপকথা। সে লালন করে চলেছে চট্টগ্রামের মানুষ ও প্রকৃতির, শিল্প ও সাহিত্যের, শিক্ষা ও সংস্কৃতির, সৃষ্টি, কৃষ্টি, উৎসবের, ইতিহাস ঐতিহ্য। জন্ম দিয়েছে কত লেখক কবি। এতে আমরা চট্টগ্রামবাসী ধন্য ও গর্বিত।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক ও সংগীতশিল্পী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতরুণ প্রজন্মের পাঠ অভ্যাসের গুরুত্ব
পরবর্তী নিবন্ধঅস্কারে যাচ্ছে ‘বলী’!