প্রায় আট বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলসমূহে আসন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে আজ। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা থেকে গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অনলাইনে হলে সিটের জন্য আবেদন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার আসন বরাদ্দের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এরপর আগামী শনিবার থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবেন। এর পরদিন রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সশরীরে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হবে।
জানা যায়, চবির হলগুলোতে সর্বশেষ আসন বরাদ্দ হয়েছে ২০১৭ সালের জুন মাসে। এরপর কয়েক দফায় আবেদন গ্রহণ করলেও প্রশাসনের ব্যর্থতাই তা আলোর মুখ দেখেনি। গত ৮ বছর ধরে প্রশাসনের উদাসীনতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেলেও আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ পায়নি অনেক শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্টরা জানান, ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপের চাপের মুখে হলে আসন বরাদ্দ দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হলগুলো নিয়ন্ত্রণে ছিল ছাত্রলীগের ১১টি উপগ্রুপের। ছাত্রলীগ যাদের মনে করতেন তাদের হলে উঠাতেন। হলে প্রভোস্ট এবং আবাসিক শিক্ষকরা ছিলেন নামেমাত্র। গত সাত বছরে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক উপাচার্য প্রফেসর শিরীণ আখতারের আমলে অন্তত ছয়বার হলে আসন বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া অসংখ্যবার হল থেকে অছাত্রদের বেরিয়ে যেতে বলে নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর করতে পারেনি প্রশাসন। একজন অছাত্রও হল ছাড়েনি। জানা যায়, চবিতে মোট ১৪টি আবাসিক হল রয়েছে। এরমধ্যে ৯টি ছাত্রদের এবং ৯টি ছাত্রীদের জন্য। ১৪টি হলে মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ৩৫৭টি। এতে মোট শিক্ষার্থীদের মাত্র ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পায়।
দীর্ঘদিন পর হলে আসন বরাদ্দ দেওয়ার খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন হলে অবৈধভাবে শিক্ষার্থীরা ছিল। হলে থাকতে হলে তাকে ছাত্রলীগ করতে হতো। অনেক অছাত্র বছরের পর বছর হলে কক্ষ দখল করে ছিল, কিন্তু মেধাবীরা হলে থাকতে পারেনি। হলের প্রশাসন থাকলেও হল চালাতো ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলোর কাছে জিম্মি ছিল। তাদের কথার বাইরে প্রশাসন গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না। যার কারণে হলগুলো পরিণত হয়েছে মাদকের অভয়ারণ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আবাসিক হলগুলোতে আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে মেধাকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের বিভিন্ন বর্ষে বা সেমিস্টারে অর্জিত জিপিএ কিংবা অনার্সে প্রাপ্ত সিজিপিএ দেখা হবে। এছাড়া প্রতিটি হলে প্রভোস্টদের জন্য ১০টি করে আসন সংরক্ষিত থাকবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও যেসব শিক্ষার্থীদের একান্ত প্রয়োজন তাদেরকে উচ্চতর যাচাই–বাছাই সাপেক্ষে এসব আসন বরাদ্দ দেয়া হবে। আসন বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাধ্যতামূলক রক্তে মাদকের উপস্থিতি পরীক্ষা করতে হবে। রক্তে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গেলে সেই শিক্ষার্থীকে আর আসন বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক।
তবে শুধু মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে সাধারণত দূরত্ব ও আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় রাখা হয়। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গ্রামের কোনো শিক্ষার্থীর একাডেমিক ফল ভালো হলে তিনি আসন পেয়ে যাবেন। অন্যদিকে ক্যাম্পাস থেকে দূরে বাড়ি ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীর ফল তুলনামূলক কম হলে তিনি আসন পাবেন না; যা একপ্রকার বৈষম্যের সৃষ্টি করবে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা–সমালোচনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে মেধার পাশাপাশি দুরত্ব ও আর্থিক অবস্থা বিবেচনার করার দাবিটি যৌক্তিক। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে খুব দ্রুত সশরীরে ক্লাস কার্যক্রম চালু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। এ জন্য আগে আমাদের হলগুলো চালু করতে হবে।
তিনি বলেন, কিন্তু আর্থিক অবস্থা ও দুরত্ব বিবেচনা করতে গেলে অনেক দীর্ঘ একটি সময়ের প্রয়োজন। সেই পরিমাণ সময় এখন আমাদের নেই। আমরা এবার অন্তত মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দিয়ে ক্লাস কার্যক্রম চালু করে দেই। পরেরবার থেকে আমরা মেধার পাশাপাশি, দুরত্ব ও আর্থিক অবস্থাকেও বিবেচনায় রাখার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করব।
হলগুলোতে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র : গত কয়েকদিন আবাসিক হলগুলোতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে প্রক্টরিয়াল বডি। এতে শহীদ আব্দুর রব, শাহজালাল, শাহ আমানত এবং গতকাল আলাওল হলে শতাধিক রামদা, মদের বোতল এবং স্টাম্প উদ্ধার করেছে। এই অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে প্রক্টর প্রফেসর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ।