মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে নগরে বজ্রপাতসহ ভারী বৃষ্টি হয়েছে গতকাল। এদিন দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৬ ঘণ্টায় ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি হয়েছে পথচারীর। বিশেষ করে বিকেলে কর্মস্থল থেকে ঘরমুখী লোকজনের দুর্ভোগ বেশি হয়েছে। টানা বৃষ্টি হলেও কোথাও জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে জানানো হয়, আজও বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া রাজধানীর আগারগাঁও ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামীকাল শুক্রবারও বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া আজ–কালের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি বিশেষ সতর্কবার্তায় চট্টগ্রাম, কঙবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং চট্টগ্রাম নদী বন্দরের জন্য ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এতে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন আজাদীকে জানান, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাইল ভূঁইয়া আজাদীকে জানান, আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকা–সমূহের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সাথে কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমি ধসের শঙ্কা রয়েছে। এ আবহাওয়াবিদ বলেন, মেঘের ঘনত্ব যেখানে বেশি সেখানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাই কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এরপর শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে চলতি মাসে : আবহাওয়া অধিদপ্তর অক্টোবর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ৩টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে হতে পারে। এ মাসের প্রথমার্ধে দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে বিদায় নিতে পারে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ২–৪ দিন মাঝারি থেকে তীর বজ্রঝড় এবং সারাদেশে ৩–৫ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। দক্ষিণ–পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কতিপয় স্থানে স্বল্প মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।