খাগড়াছড়ি সদরে গণপিটুনিতে শিক্ষকের মৃত্যুর জেরে পাহাড়ি–বাঙালি দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। এদিকে ১৪৪ ধারা জারির ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল বুধবার বিকাল ৩টায় তা তা প্রত্যাহার করে নেয় জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকাল থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের পানখাইয়াপাড়া ও মহাজনপাড়ায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কিছু দোকান, হাসপাতাল ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। আগুন দেওয়া হয় মোটরসাইকেলে।
গতকাল সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য কমিটি করা হয়েছে। নতুন করে যাতে সহিংসতা না বাড়ে সেজন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বুধবার বিকাল ৩টা থেকে ১৪৪ ধারা বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে এবং সরকারি কাজে বাধা ও হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হলেও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা মোকাবেলায় অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আইন কোনোভাবে নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। এখন পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। শিক্ষক হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। নিহতের পরিবারের সদস্যরা এখনো খাগড়াছড়ি এসে পৌঁছায়নি। তারা এলে মামলা হবে। যারা দোষী আমরা তাদের গ্রেপ্তার করব।
গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রোজলিন শহীদ চৌধুরী বলেন, আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি এবং খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ।
শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় সেনাবাহিনীর আহ্বান : খাগড়াছড়িতে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান। গতকাল দুপুরে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কনফারেন্স রুমে বাঙালি নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান সংঘাত ও সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঘটনার প্রেক্ষিতে পাহাড়ি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের বিপক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করে পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা। এ ঘটনার জেরে বিকাল থেকে শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করা হয়।