নিরন্তর অধ্যবসায় ও কঠোর শ্রমের মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশকে সম্মানের উঁচু জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে। মেধাবীরা কেবল একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও সভ্য দেশ প্রতিষ্ঠিত করে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে তা নয়, এরা একটি দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সুশাসন ও উন্নয়নের চিত্র সারা বিশ্বের কাছে জননন্দিত করে তুলতে পারে। তাই বলছি, মেধাবীরা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। মেধাবীরা মেধার পরিচর্যায় পিছিয়ে পড়া সমাজকে বিকশিত করে তুলতে সক্ষম। মেধাবীরা সমাজের কুসংস্কার, অন্যায়, শোষণ–নির্যাতন ও দুর্নীতি রোধ করে সুশাসন ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তাই, সর্বস্তরের জনগণ মেধাবীদের প্রজ্ঞা ও মেধার যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে, মেধাবীদের সৎ, আদর্শবান ও মানবিক হওয়া অপরিহার্য। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে তাঁদের প্রকৃত মেধাবী বলা যায় না। যদি মেধার সাথে দেশের প্রতি মমত্ববোধ, মূল্যবোধ ও মানবিকতা না থাকে তবে তাঁরা যথার্থ মেধাবী নয়। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের দ্বারা যদি কোনো বিশেষ জনগোষ্ঠী বা সমাজের কল্যাণ না হয় তবে সে মেধা জাতির জন্য ভয়ংকর। মেধাবী সন্তান থাকা সত্ত্বেও যদি বৃদ্ধ মা বাবা কষ্ট পায়, তারা ভালো সেবা ও চিকিৎসা সুবিধা না পায়, কিংবা তাঁদের বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয় তবে সে মেধাকে ধিক্কার জানাই। মেধাবী হয়েও যদি সমাজের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে না পারে তবে সে মেধা প্রশ্নবিদ্ধ। এমন অনেক মেধাবী ডাক্তার আছেন, যাঁরা রোগীদের নানা অজুহাতে ভোগান্তি দেন ও আর্থিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন না। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এসব মেধাবীদের আচরণে জাতি খুবই লজ্জিত। মেধাবী শিক্ষার্থীর কাছে আজ সম্মানিত শিক্ষকরা শঙ্কিত ও নির্যাতিত। বর্তমান সময়ে গুণীজনদের প্রতি শ্রদ্ধা নেই বললেই চলে। মেধাবীরা আজ অন্যায়ভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, দুর্নীতি, গুজব রটানো এবং ধর্মান্ধ আচরণ কখনো মেধাবীদের কাজ হতে পারে না। মেধাবী হয়ে যদি অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে কিংবা অন্যায়কে সমর্থন করে তবে সে মেধা জাতির জন্য খুবই অশুভ। মেধাবীদের ন্যায় অন্যায় বিবেচনাবোধ থাকলে দেশে আজ এতো অস্থিরতা থাকতো না। আর এ বিবেকবোধ অর্জনের জন্য মেধাবীদের আগে মানুষ হওয়া জরুরি। ছোটোবেলা থেকেই পারিবারিক সুশিক্ষার ফলে এসব গুণাবলি অর্জন করতে হয়। নতুবা, সন্তানরা শুধু মেধাবী হবে, মানুষ হবে না। তাই ব্যক্তি, সমাজ, দেশ সবকিছুতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও ইতিবাচক মনোভাব তৈরীতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মেধাবী হওয়ার আগে মানুষ হতে হবে।