এবার বিমান ও নৌ বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও আইন–শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিল সরকার। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের (প্রেষণ–২ শাখা) সিনিয়র সহকারী সচিব জেতি প্রুর সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে সশস্ত্র বাহিনীর (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমমর্যাদার) কর্মকর্তাদের মতো রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ফৌজদারি দণ্ডবিধি ১৮৯৮–এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে পরবর্তী ৬০ দিন পর্যন্ত তারা এ ক্ষমতা পাবেন। এর আগে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছে। তাই তাদের একটা ক্ষমতার ভেতরে কাজ করতে হবে। আশা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌ বাহিনীকে যে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে, এর সুফল ভোগ করবে বাংলার জনগণ। কেননা, এখনো দেশে জননিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি। হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আজও স্বাভাবিক হয় নি। খুন যেমন বাড়ছে, তেমনি পিটিয়ে হত্যাসহ নানা ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে জনগণের মধ্যে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সাড়ে ৪০০–এর বেশি থানায় হামলা, অস্ত্র লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পিটিয়ে হত্যা করা হয় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। এরপর পুলিশ কর্মবিরতি ঘোষণা করলে অপরাধীরা অবাধে বিচরণ করতে থাকে এবং নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে। পরে পুলিশ কাজে ফিরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও অপরাধীদের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়েনি। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত দেড় মাসের কিছুটা বেশি সময়ে শুধু রাজধানীতে শতাধিক খুন, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৩০টি। এসব ঘটনায় জড়িত অপরাধী ধরা পড়ার সংখ্যা খুবই কম। পুলিশের ভাষ্য, নানা অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধীরা এতদিন কারাগারে ছিল। এখন যেসব অপরাধ হচ্ছে, সেসব অপরাধে তাদের নামও আসতে শুরু করেছে। অর্থাৎ তারা বের হয়ে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ডিএমপির একাধিক থানার ওসির মত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে আগের চেয়ে কিছুটা খারাপ হয়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। পুলিশের ভেতর এখনো আতঙ্ক রয়েছে। তাছাড়া সব থানাতেই সমপ্রতি তাদের পদায়ন হয়েছে। এখনো এলাকা হিসেবে সবকিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। তবে দাগি আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে অপরাধীদের হাতকে শক্তশালী করছে। এরই প্রভাবে বেড়েছে সব ধরনের অপরাধ।
আসলে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধান নিয়ে দেশের জনগণ সংশয়ে আছেন। কেননা স্পষ্টত লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে পুলিশের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে সংঘাত–সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের মানুষ খুবই আতঙ্কে আছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। পুলিশের অনুপস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছেন। কিন্তু সেটা তো পরিকল্পিত ও নিয়মমাফিক ছিল না। তারা তাদের মতো করে এইসব কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জননিরাপত্তা এখনও পরিপূর্ণভাবে দেশে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে এর পেছনে নানা কারণও বিদ্যমান তা অনেকের অভিমত। একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে আমলে রাখতে হবে, ‘জনবিড়ম্বনা এবং সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্মে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে পরিস্থিতি বৈরিতার গণ্ডিতেই থেকে যায়।’ দেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রত্যেক স্তর থেকে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তা আমরা চাই না। তাই এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। যারা মানুষ হত্যা করছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পিটিয়ে মানুষ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। বিগত দেড় যুগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছিল একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনের আখড়ায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের ফলে সেই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুক্ত হলেও নতুন দুর্বৃত্তরা যে শূন্যস্থান পূরণে থাবা বিস্তারের চেষ্টা করছে ঢাবি ও জাবির দুই হত্যাকাণ্ড তারই প্রমাণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ‘মব জাস্টিস’–এ জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। আমরা আশা করব, মব জাস্টিসে জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।