‘পতিত স্বৈরাচারের’ দোসরদের প্ররোচনা থেকে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালালেও সবাইকে নিয়ে যায়নি। এ স্বৈরাচারের দোসররা আমাদের মাঝে এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা প্রতিনিয়ত বিপথগামী করার জন্য প্ররোচনা দিচ্ছে। তাদের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে আমাদের অনেক সহকর্মী তাদের সেই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
এসময় পতিত স্বৈরাচারের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি শিক্ষা নিতে না পারি আমাদের পরিণতি কি হবে তা সহজে অনুমেয়। আমাদের নেতা তারেক রহমান বারবার আপনাদেরকে, আমাদেরকে সতর্ক করছেন। আমাদের রাজনীতির গুণগত মান পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের কোনো অপকর্মের দায় প্রিয় অভিভাবক তারেক রহমান এবং দল গ্রহণ করবে না। আমরা একটি আদর্শ বিশ্বাস করি। সেই দলটাকে সবার উপরে আমাদের স্থান দিতে হবে।
তিনি গতকাল শনিবার বিকেলে নগরের কাজীর দেউড়ি সংলগ্ন একটি কনভেনশন হলে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলার উদ্যোগে আয়োজিত দিক–নির্দেশনামূলক যৌথ কর্মীসভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নির্দেশনায় সারা দেশে এ ধরনের কর্মীসভা আয়োজন করা হচ্ছে।
কর্মীসভায় প্রধান আলোচক ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ–সভাপতি ইয়াছিন আলী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ–সভাপতি আবু রাফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া। এস এম জিলানী বলেন, সদ্য একটি ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে এ দেশ থেকে চিরতরে উৎখাত করেছে সেটা আমরা দেখেছি। কত ক্ষমতাধর মানুষ আমাদের চোখের সামনে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেল। ক্ষমতার দাপট ছিল বেনজির আহমেদের। সে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দিয়েছিল। সে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করে বিদেশে পাচার করেছে। সে দেশ থেকে পালিয়ে যেখানেই পড়ে থাকুক মানুষের সাথে কি মিশতে পারবে? বাংলাদেশের কমিউনিটি কারো সাথে সে সম্পর্ক করতে পারবে? এখন অসহায় এক হৃদয় বিদারক যন্ত্রণার মধ্যে বসবাস করছে বেনজির। আমার হাজার হাজার টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচারকারী দরবেশদের পরিণতিও দেখেছি। সুতরাং এদের ইতিহাস আমাদের মনে রাখতে হবে এবং এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর একটি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের মানুষের হারানো গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার এবং বাক স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করেছি। শেখ হাসিনা ও তার দোসররা ২০০৭ সালে লগি বৈঠা তাণ্ডবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি শুরু করেছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রিয় আমাদের নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ৭ বছর কারাগারের অন্তরালে আবদ্ধ করে রাখে। প্রিয় নেতাকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অসংখ্য মামলা দিয়ে ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থান করতে বাধ্য করেছিল। বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে তারা গুম–খুন করেছে। এই অত্যাচার নির্যাতন গুম খুনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত ৫ আগস্ট। ছাত্র–জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে একটি দীর্ঘ ১৭ বছরের একটি ফ্যাসিবাদকে আমরা হঁটিয়েছি।
কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। যুবদলের নাম ভাঙিয়ে কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং আগামী দিনেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাই দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী বলেছেন বাংলাদেশ ছাড়া আমার কোনো ঠিকানা নেই। খুনি হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও তাদের লালিত পালিত দোসর এমনকি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব পর্যন্ত পালিয়ে গেছে। তাদের অপকর্মের জন্য তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আমাদেরকে আগামী দিনে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ–সভাপতি ইয়াছিন আলী বলেন, যদি আমরা জনগণের হৃদয়ে অবস্থান করতে পারি জনগণই আমাদের ভালোবেসে ক্ষমতায় বসাবেন। আমরা জিয়াউর রহমানের আমলের বাংলাদেশ গড়তে চাই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলের বাংলাদেশ গড়তে চাই। একটি সুশৃঙ্খল ও সুন্দর বাংলাদেশ গঠন করার জন্য দেশনায়ক তারেক রহমান দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তার সৈনিক হিসেবে আপনাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ–সভাপতি আবু রাফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভিন্নভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত আছে। ছাত্রদলকে সর্বদা সজাগ থেকে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে ওয়াসিম, রাব্বি ও তানভীরসহ অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগকে সম্মানিত করতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্রদলকে কঠোর কর্মসূচি নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্যাসিবাদের কোলে লালিত হওয়া সন্ত্রাসীদের উৎখাত করতে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি আন্দোলন ব্যর্থ হতো তাহলে ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলের শিকার হতো ছাত্রদল তথা বিএনপি। জিয়া পরিবারের বিশ্বস্থ ভ্যানগার্ড ছাত্রদল। ছাত্রদল সর্বদা গণতন্ত্রের ঢাল হিসেবে সবসময় রাজপথে ছিল। আগামীতেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। নিজে সৎ থাকলে আমরা জনগণের মাঝে সততা প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মো. শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মনজুর আলম তালুকদার ও সদস্য সচিব জমির উদ্দিন মানিক, মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব কামরুদ্দিন সবুজ।