রাঙামাটিতে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব

তিনদিনে কামড়ের শিকার ৭৯ ব্যক্তি

রাঙামাটি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য জেলা রাঙামাটি শহরে হঠাৎ করেই মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তিন দিনে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত অন্তত ৭৯ ব্যক্তি। হাসপাতালে ভর্তিও আছেন কয়েকজন। গত বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫৪ জন থাকলেও বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও ২৫ জন কুকুরের কামড়ের শিকার হন। হঠাৎ করেই শহরের বেওয়ারিশ কুকুরের এমন আচরণে হতবাক স্থানীয়রা, জনমনে ছড়িয়েছে আতঙ্ক।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের জলাতঙ্ক বিভাগ থেকে ৭৯ জন রোগী ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে চম্পকনগর, ট্রাইবেল আদাম, কে কে রায় সড়ক, দেবাশীষ নগর, কল্যাণপুর, কলেজ গেইট, ভেদভেদী, শিমুলতলী, রাঙাপানি, ২ নম্বর পাথরঘাটা, রিজার্ভবাজার, আসামবস্তি ও তবলছড়ি এলাকার বাসিন্দারা রয়েছেন।

জানতে চাইলে রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে আহত ৭৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আজকে (বৃহস্পতিবার) যে তথ্য পেয়েছি একটি কুকুরই একা ১৫১৬ জনকে কামড়িয়েছে। আমরা ধারণা করছি, কুকুর পাগল হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কী কারণে বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে এত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এটা ভাবনার বিষয়।

সিভিল সার্জন জানালেন, তাদের কাছে হাসপাতালে মজুদ যে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন রয়েছে; তা আরও ২০০ জন দেওয়া যাবে। আনুমানিক এক সপ্তাহ দেওয়া যাবে।

জেলা শহরের ভেদভেদী এলাকার বাসিন্দা অয়ন চক্রবর্তী জানান, বৃহস্পতিবার সকালে অসুস্থতা জনিত কারণে হাসপাতালে যাওয়ার পথে এলাকার মুখে একটি কুকুর আমাকে কামড়ে দিয়েছে। হাতপাসহ তিনটি স্থানে কামড়ের দাগ রয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি আমাকে কামড়ানোর আগেই এলাকায় আরো তিনচারজনকে আক্রান্ত করেছে।

পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কুকুর দেখভাল করে থাকে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া বেওয়ারিশ কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণে বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি করা হয়ে থাকে। বন্ধ্যাত্বকরণ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনকে স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগও সহযোগিতা করে থাকে। যদিও রাঙামাটি পৌর এলাকায় কী পরিমাণ বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে এ সংক্রান্ত কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি পৌরসভা ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে। দুটি প্রতিষ্ঠানই বেওয়ারিশ কুকুর পরিসংখ্যানের দায়িত্ব একে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।

রাঙামাটি পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমান বলেন, কুকুরের কামড়ে পথচারী আহত হওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন যে, যেসব কুকুর তাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় সেগুলোকে তারা ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে পৌরসভার অর্থায়নে ভ্যাকসিন কিনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে জেলা প্রশাসকের গাড়ির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, পথচারী শিশু নিহত
পরবর্তী নিবন্ধএমইএস-ইস্পাহানি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ