বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নারী দল ব্যর্থতার চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে বছরের পর বছর। সেই ২০১৪ সালে দেশের মাঠে নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর পেরিয়ে গেছে চার–চারটি বিশ্বকাপ। কোনো ম্যাচে জয় তো বহুদূর, সেভাবে সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি তারা। সময়ের সঙ্গে খরা প্রকট হয়েছে। ক্ষুধা তীব্র হয়েছে। এবার তা মেটানোর পালা। অধিনায়ক নিগার প্রত্যয়ী কণ্ঠেই বললেন, তাদের প্রথম লক্ষ্য জয়। সেটি পূরণ হয়ে গেলে স্বপ্নের সীমানায় আছে সেমি–ফাইনালও। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা ছাড়বে নিগারের দল। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের মূল লড়াই শুরু আগামী ৩ অক্টোবর। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সফরপূর্ব সংবাদ সম্মেলন, ফটোসেশনের আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গেল গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে। নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাঁচ আসরে ২১ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় কেবল দুটি। ২০১৪ আসরে ওই দুটি জয়ের পর সবশেষ টানা ১৬ ম্যাচে আর ধরা দেয়নি জয়। সেই দলের জাহানারা আলম ও ফাহিমা খাতুন ছাড়া আর কেউ নেই এবারের দলে। দলের সেরা ব্যাটার ও অধিনায়কের পাশাপাশি বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা নিগার কখনও বিশ্বকাপে জয়ের স্বাদই পাননি।
সেই খরা কাটানোর আশার পালে জোর হাওয়া লাগতে শুরু করেছে এবার বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই। নিগার সোলতানা বলেণ আমার মাথায় এটা সবসময় থাকে যে, আমি নিজেও চারটি বিশ্বকাপ খেলেছি। এখনও পর্যন্ত একটা ম্যাচ জিততে পারিনি। অবশ্যই এবার বিশ্বকাপে আমার ব্যক্তিগতভাবে যেমন লক্ষ্য, তেমনি গোটা দলেরই লক্ষ্য যেন আমরা একটা ম্যাচ জিতে শুরু করতে পারি। বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে স্কটল্যান্ড। তাই ভরসা পাচ্ছে টাইগার নারীরা।
নিগার বলেন স্কটল্যান্ড কিন্তু এখন নিয়মিতই ভালো ক্রিকেট খেলছে। বিশ্বকাপের মতো জায়গায় সব দলই ভালো ক্রিকেট খেলার প্রত্যাশা নিয়েই আসে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, লম্বা সময় ধরে আমাদের সবার যে ক্ষুধা, বিশ্বকাপে একটি জয়, সেটা যেন পেতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি সবার আগেই পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৩ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু নিগারদের বিশ্বকাপ। ম্যাচটিতে নিগারের বাড়তি রোমাঞ্চ থাকবে ব্যক্তিগত একটি অর্জনের কারণেও। টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার ম্যাচ এখন ৯৯টি। নারী ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে কোনো সংস্করণে শততম ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন এই কিপার–ব্যাটার। নিজের মাইফলক ম্যাচটি দলীয় অর্জনেই রাঙাতে চান নিগার।
তিনি বলেন প্রথম ম্যাচ জিততে চাই। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার জন্য ও গোটা দলের জন্য বড় একটি অর্জন হবে তা। ব্যক্তিগতভাবে ১০০তম ম্যাচ, অবশ্যই বড় ব্যাপার। যদিও জানি না এখনও, খেলতে পারব কি না। যদি সুস্থ থাকি ও খেলি, তাহলে লক্ষ্য তো এটাই থাকবে। এটা যেন স্পেশাল হয়ে থাকে। স্মরণীয় হয়ে থাকে সবার জন্য। তিনি বলেন আমরা জানি যে, আমাদের ক্রিকেট যদি এক ধাপ এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে বিশ্বকাপের চেয়ে বড় জায়গা আর হতে পারে না। ওখানে ভালো করলে আমাদের মেয়েদের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে। শুধু আমরা নই, বাকি যে মেয়েরা, বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলতে চায় বা স্বপ্ন দেখে তাদের জন্য আমরা ভালো কিছু করতে চাই। এই বিশ্বকাপ নিয়ে নিগারদের বাড়তি রোমাঞ্চও ছিল। বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশেই। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বিশ্বকাপ এখান থেকে সরে গেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজক এখনও বাংলাদেশই। তবে খেলা হবে দুবাই ও শারজাহতে। এই দুই ভেন্যুতে আগে কখনোই খেলেননি নিগাররা। এবার বিশ্বকাপের আগে অবশ্য দুবাইয়ে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। আগামী শনিবার শ্রীলঙ্কা ও সোমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে দুবাইয়ের দুটি ম্যাচ থেকে উইকেট নিয়ে ধারণা নিতে চান নিগার।
২০২২ সালে আমরা খেলেছি আবুধাবিতে। সেখানে উইকেট অনেক সুন্দর ছিল। এবার শারজাহ আমাদের জন্য পুরো নতুন ভেন্যু। তবে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ আমরা খেলব। সেখান থেকে কম–বেশি কিছু ধারণা পাব। গ্রুপে চার ম্যাচের তিনটিই বাংলাদেশ খেলবে শারজাহতে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শুরুর পর এখানে ৫ অক্টোবর খেলা ইংল্যান্ডের সঙ্গে ও ১০ অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে। দুবাইয়ে ১২ অক্টোবর লড়াই দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। টাইগার অধিনায়ক বলেন সেমি–ফাইনালে যেতে হলে কিন্তু শুধু স্কটল্যান্ড নয়, বাকি তিনটা ম্যাচ থেকেও জিততে হবে। প্রতিটি দলের বিপক্ষে ভিন্ন পরিকল্পনা তো অবশ্যই থাকবে। প্রতিটি ম্যাচের আগে যদি ওই দলের প্রতি বেশি মনোযোগ দেই এবং যদি আমাদের ম্যাচ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আমরা কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে এসেছি টি–টোয়েন্টিতে। তাই তাদের বিপক্ষে আমাদের ভালো অভিজ্ঞতা আছে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের বরাবরই শুধু বিশ্বকাপে দেখা হয় এবং খুবই কম খেলা হয়। ওরা নতুন প্রতিপক্ষ। ওদের জন্যও কিন্তু কঠিন হতে পারে। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকবে ম্যাচ জেতা।