কালুরঘাট সেতুর উপর গাড়ি চলাচলের জন্য আরও এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দলের তিন সদস্যের প্রতিনিধি সেতুর কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। সংস্কারকাজ পর্যবেক্ষণ শেষে কালুরঘাট সেতুতে যানবাহন চলার পক্ষে ‘মত’ দিয়েছেন তারা।
পরির্দশন শেষে সেতুর যে সামান্য কাজ বাকি সেগুলো সম্পন্ন করাসহ গাড়ি চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেয়ার ব্যাপারে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন বুয়েট বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েট বিশেষজ্ঞ টিমের প্রধান বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল আমীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল সেতু পরিদর্শন করেন। বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে জীর্ণশীর্ণ কালুরঘাট সেতুটি গত বছরের ১ আগস্ট থেকে সংস্কার কাজ চলছে। রেলওয়ের প্রকৌশলীরা জানান, প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বুয়েট প্রকৌশলীদের পরামর্শে সংস্কার করা হচ্ছে কালুরঘাট সেতুটি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়ি চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত কালুরঘাট সেতু। সামান্য কিছু রঙের এবং ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি আছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা গাড়ি চলাচলের জন্য সংকেত দিলেই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানান সেতু সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এর আগে গত শুক্রবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী সংস্কারাধীন কালুরঘাট সেতু পরিদর্শনে যান। এ সময় যান চলাচলের জন্য সেতুটি কখন স্বাভাবিক হবে জানতে চাইলে রেল সচিব বলেন, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে সেতুর সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা পরির্দশনে আসবেন। তারা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে সেতুতে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ধারণা করছি আগামী এক মাসের ভিতর যানচলাচল স্বাভাবিক হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত গতকাল আজাদীকে বলেন, আজকে (গতকাল) বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা সেতু পরির্দশনে এসেছেন। প্রথমে উনাদের নিয়ে আমরা সকালে সিআরবিতে মিটিং করেছি। এরপর দুপুর ১টায় উনাদের নিয়ে সেতু এলাকায় এসেছি। উনারা সেতু পরিদর্শন করেছেন। সেতুর সংষ্কার কাজের বিষয়ে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল সন্তুুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। ব্রিজ রং ও স্ট্রিট লাইট বসানোর কাজ বাকি আছে। এসব কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, দেশের বৃহত্তম পর্যটন নগরী কঙবাজারে ট্রেন চালুর জন্য জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হয় গত বছরের ১ অগাস্ট থেকে। গত বছরের ৫ নভেম্বর কঙবাজারের পথে রেল চলাচল শুরু হয়। কিন্তু যানবাহন চলাচল এখনো শুরু হয়নি।
যানবাহন চলছে অবাধে, ঘটছে দুর্ঘটনা : চলাচলের জন্য সেতু এখনো উন্মুক্ত না হলেও দেদারসে চলছে যানবাহন। সিএনজি টেঙি, টেম্পো, কার, মোটরসাইকেল–সবই চলছে। কখনো কখনো ঘটছে দুর্ঘটনাও।
জানা গেছে, গেটের দায়িত্বরতরা বারণ করলেও তাদের কথা শুনতে নারাজ চালকরা। উল্টো চালকরা দায়িত্বরতদের ধমক দিয়ে বসেন। পরে বাধ্য হয়েই গাড়ি উঠতে দেওয়া হয়। নির্দেশনা অমান্য করে বেপরোয়াভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ২ সেপ্টেম্বর দুপুরে তেলবাহী একটি ওয়াগন শহরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় সিগন্যাল না মেনে সেতুতে ওঠে এলেই বেপরোয়া কয়েকটি মোটরসাইকেল ওয়াগনটির সামনে এসে পড়ে। তবে ট্রেনের গতি ধীর থাকায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এরপর গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে অতিরিক্ত গতির ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর রেলিং (নিরাপত্তা বেষ্টনী) ভেঙে একটি জিপ কর্ণফুলী নদীতে পড়ে যায়। এ সময় গাড়িতে থাকা দুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা।