কামাল গরীবের ছেলে। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভালো না। মামা শিক্ষকতা করেন। ভাগ্যের কারণে তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগে আছে। কামালের মা গৃহিনী। কামাল ক্লাশ ফোরে পড়ে। একমাত্র ছোট বোন লিপি ক্লাশ ওয়ানে পড়ে। অর্থ কষ্টে সংসার চলে বটে। কিন্তু শিক্ষক বাবা এবং গৃহিনী মা, সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মা–বাবা কামালকে সব সময় ভালো উপদেশ দিয়ে থাকেন ভালো মানুষের সাথে মিশতে ভালো ব্যবহার করতে। কারো কোন প্রকার ক্ষতি না করতে। কেউ খারাপ ব্যবহার করলেও যাতে প্রতিবাদ না করে নিজ থেকে সরে যাবার কথা বলেন। ছাত্র হিসেবে কামাল ও লিপি উভয়ই অত্যন্ত মেধাবী। এলাকায় ওদের বেশ সুনাম আছে। এলাকার স্থানীয় চেয়ারম্যানের বখাটে ছেলে সেলিম। ওদের সে সহ্য করতে পারে না। নানানভাবে ওদের নাজেহাল করে থাকে। অপমান ও খারাপ ব্যবহার করে।
আজ কামাল স্কুল থেকে আসার সময় সেলিম হঠাৎ কামালকে লক্ষ্য করে একটা সেন্ডেল ছুঁড়ে মারে। কামাল কিছু না বলে ঐ সেন্ডেল নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে।
সন্ধ্যার পর চেয়ারম্যানের বাড়িতে একটা সামাজিক অনুষ্ঠান চলছিল। প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ কামালকে দেখে চেয়ারম্যান বললেন।
কী রে, কী জন্য এলি?
কামাল বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব। আমি শিক্ষকের ছেলে। অনেক কষ্টে আমাদের দিন চলে। আপনার ছেলে সেলিম প্রতিদিনই রাস্তায় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কখনো কিছু না বলে নীরবে সহ্য করতাম।
আজ আমি স্কুল থেকে বাড়ি যাবার সময় আমাকে তিনি সেন্ডেল ছুঁড়ে মারেন। তাই বাধ্য হয়ে এলাম। সেন্ডেলের আরেক পাটটা যদি আমাকের দেয়া হয়। একজোড়া হলে অন্তত একটাকায় মুচির কাছে বিক্রি করা যাবে। একটা রেখে তো উনার কোন লাভ হবে না।
সরকারী কর্মকর্তাদের সামনে কথাগুলো শুনে লজ্জা পেলো চেয়ারম্যান।
ঐ কর্মকর্তাদের মধ্যে ইউ.এন.ও অবাক হয়ে, কামালকে কাছে ডেকে আদর করলেন।
চেয়ারম্যানকে তিরস্কার করে বললেন মাস্তান ছেলের পিতা হয়ে এলাকাবাসীর কী সেবা করেন?
এমন কান্ড তো কেউ আশা করে না।
তৎক্ষণাৎ চেয়ারম্যান নিজের ছেলেকে ডেকে বিস্তারিত জানতে চাইলেন।
ছেলের কাছ থেকে সত্য স্বীকৃতি শুনে, চেয়ারম্যান উপস্থিত সবার সামনে ছেলেকে বললেন। প্রকাশ্যে কামালের কাছে ক্ষমা চাইতে। এবং ওয়াদা করতে হবে যে,ভবিষ্যৎতে কারো সাথে কোন প্রকার খারাপ আচরণ করবে না। কোন প্রকার ক্ষতি করবে না। কাউকে অপমান করবে না।
আজ থেকে কামালকে সে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো আদার যত্নন করবে। ওদের বিপদে সহযোগিতা করবে। চেয়ারম্যান পুত্র সেলিমের প্রতিশ্রুতি কামালের সততা দেখে উপস্থিত সবাই খুশি হলো।
কামালের ম বাবার প্রশংসা করলেন। তারা সন্তানকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার যে প্রচেষ্টা করছেন তার জন্য খুশি হলেন।
যে কোন শিক্ষার্থীর একাডেমিক শিক্ষার চাইতে নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা অর্জন করা একান্ত অপরিহার্য।
নৈতিক শিক্ষা সাফল্যের সোপান। নৈতিক শিক্ষা, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট তথা বিশ্ববাসীকে আলোকিত করতে সক্ষম।
নৈতিক শিক্ষা অর্জন করায় কামাল অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হলো।