চকরিয়ায় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে সেনা কর্মকর্তা নিহত

অস্ত্র ও গুলিসহ ৬ ডাকাত আটক

চকরিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা। গত সোমবার শেষ রাতে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) চকরিয়ায় কর্মরত ছিলেন। লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্‌তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন ডাকাত কর্তৃক ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লেফটেন্যান্ট তানজিমের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। তিনি ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে ২০২২ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।

এদিকে সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভিযানে যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৩ জন এবং সন্দেহভাজন আরও তিনজনসহ ৬ ডাকাতকে আটক করেছে। এ সময় দেশে তৈরি একটি বন্দুক, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদও উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।

এর আগে সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় একটি বসতবাড়িতে ডাকাত হানা দিয়েছেএই খবরে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ডাকাত কবলিত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এ সময় পুলিশও সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। আনুমানিক ৪টার দিকে মাইজপাড়ায় অভিযান পরিচালনা করার সময় ৭৮ সদস্যের একদল ডাকাত সেনা টহলদলের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ডাকাতদলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এ সময় ডাকাতেরা তানজিমের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় পাশের মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তানজিমকে মৃত ঘোষণা করেন। আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাত ৩টার দিকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বসতবাড়িতে ডাকাতদলের হানা দেওয়ার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর দলটি ডাকাতের কবলে পড়া ব্যবসায়ীর বাড়িতে যায়। যৌথবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে সশস্ত্র ডাকাতেরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম এক ডাকাতকে ধরে ফেললে ওই ডাকাত ধারালো ছুরি দিয়ে ঘাড় ও মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন সেনা কর্মকর্তা।

পুলিশ জানায়, নিহত সেনা কর্মকর্তা তানজিম ছারোয়ার নির্জনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় কঙবাজার সদর হাসপাতালে। এরপর লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া আজাদীকে বলেন, সেনা কর্মকর্তা তানজিম ছারোয়ারের মরদেহ সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে কঙবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ ও চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পলিশ সুপার মো. রকীব উররাজা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ডাকাতদের গ্রেপ্তারে পুলিশকে সাঁড়াশি অভিযানের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার।

চিরঘুমে সেনা কর্মকর্তা নির্জন : বিডিনিউজ জানায়, চকরিয়ায় অভিযানের সময় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারানো সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের লাশ টাঙ্গাইলে দাফন করা হয়েছে। গতকাল বাদ আসর টাঙ্গাইলের বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে তার লাশ স্থানীয় কবরস্থনে দাফন করা হয়। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ জানাজায় অংশ নেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ৩টায় তরুণ এই সেনা কর্মকর্তার লাশ বহনকারী সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার টাঙ্গাইল জেলা সদর হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নির্জনের লাশ গ্রহণ করেন। নিহতের পরিবারের কয়েকজন সদস্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন। হেলিকপ্টার থেকে লাশ নামিয়ে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে তুলে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় সদর উপজেলার করের বেতকায় তার নিজ গ্রামে। বাড়িতে লাশ পৌঁছার পর সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবামা। ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় একমাত্র বোন সূচি। নির্জনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান সবাই।

নির্জনের মামা আশরাফ আলী খান বলেন, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টায় সেনাবাহিনী থেকে ফোন করে আমাদের জানানো হয় নির্জন অসুস্থ, আপনারা চট্টগ্রাম আসেন। আমরা রওনা হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পর্যন্ত গেলে তারা আবার ফোন করে নির্জনের মৃত্যুর খবর জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছয় বছরে ব্যাংকের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ
পরবর্তী নিবন্ধনাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১০