শিক্ষার মানদণ্ড জ্ঞান। জ্ঞানের বাহন বই। সেই বইটা কাগজের বা ভার্চুয়াল দুটোই হতে পারে! প্রশ্ন হলো কতগুলো বই পাঠ করলে শিক্ষিতের মানদণ্ডের বিচারে উত্তীর্ণ হওয়া যায়? শিক্ষা জীবনে কতগুলো গ্রন্থ আত্মস্থ করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে শিক্ষিত বলে গণ্য হতে পারে, এরকম কোন ব্যাখ্যা কোথাও নেই, হতেও পারে না! কারণ শিক্ষা হলো অপরিসীম, অনিঃশেষ এবং সীমানাবিহীন! কিন্তু আমাদের কৌতুহলী এবং অনুসন্ধিৎসু মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতেই পারে ‘শিক্ষিত‘ এর সংজ্ঞা কী বা কেমন হওয়া উচিৎ? কেউ কোন একাডেমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও অনেক বই পড়ে স্বশিক্ষিত বা শিক্ষিত হতে পারেন, জ্ঞানীও হতে পারেন বৈ কী! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা কাজী নজরুল ইসলাম তেমনই মানুষ ছিলেন। আবার আরজ আলী মাতুব্বরের কথাও যদি বলি সেটাও প্রাসঙ্গিক হতে পারে। তিনিও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং সনদবিহীন স্বশিক্ষিত।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, আরজ আলী মাতুব্বর বা এরকম জগতে আরো অনেক জ্ঞানী ও শিক্ষিত মানুষ আছেন যাঁদের রচিত বই পড়ে আমরা অনেকে শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করতে সচেষ্ট আছি। তাঁদের লিখা বই আলো ছড়িয়েছে। সেগুলো পড়ে অসংখ্য মানুষ আলোকিত হয়েছেন।
সঙ্গত কারণেই তাই প্রশ্ন জাগে, একাডেমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কি শিক্ষিত হয়ে যায় নাকি প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করলেই কাউকে শিক্ষিত বলা যায়? শিক্ষিত শব্দটির ব্যাপ্তি, গভীরতা এবং অন্তর্নিহিত মর্মার্থটি অনেক ওজনদার নিঃসন্দেহে! অনেক বড় বড় ডিগ্রি বা সনদ অর্জন করেও কেউ যদি জীবনের প্রকৃত পাঠ থেকে বঞ্চিত থাকে, এমনকি মনুষ্যত্ববোধ অর্জন, ধারণ–লালন থেকে বঞ্চিত থাকে তাহলে সেই সার্টিফিকেট বা সনদ কাউকে শিক্ষিত হিসেবে মূল্যায়ন করতে পারে কী?
কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার বদৌলতে শিক্ষিত হওয়া সহজ নয় মোটেই! যথাযথ জ্ঞান অর্জন এবং জীবনে তার যথাযথ প্রয়োগ না থাকলে কোন শিক্ষা শিক্ষাই নয়, কোন জ্ঞানী জ্ঞানী নয়! যে শিক্ষা মানুষ, সভ্যতা, সমাজ এবং জগতের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ এবং ক্ষতির বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায় সে শিক্ষা শিক্ষা হতে পারে না! সভ্যতার আলো জ্বালিয়ে মানুষকে প্রকৃত আলোর সন্ধান দেয় যে শিক্ষা সেটাই আসল শিক্ষা বা প্রকৃত জ্ঞান।
বলা হয়ে থাকে নিজের পরিবার হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় বা জ্ঞানের একক এবং শক্তিশালী ভিত্তিমূল। যেখান থেকে শুরু হয় জ্ঞান অর্জনের পথচলা বা জ্ঞানের পাঠশালার সূত্রপাত। এরপর আমাদের একেকজনের জীবনধারা একেক ধাঁচের শিক্ষার দিকে এগোতে থাকে। কারো শিক্ষা গতানুগতিক, কারোটা ইতিবাচক, কারোটা আবার নেতিবাচক শিক্ষা! তাই সঠিক জ্ঞান ছাড়া প্রকৃত শিক্ষিত হওয়া সম্ভব নয়! শিক্ষা হলো আলোর খোঁজ পাওয়া। জ্ঞান হলো অন্ধকার দূরীকরণের মূলমন্ত্র। যার আলোয় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বোপরি মানব সভ্যতা আলোকিত হতে পারে। সঙ্গতকারণেই বলা যায় কোন প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট বা সনদ নয়, জ্ঞানই ‘শিক্ষিত‘ এর প্রকৃত মানদণ্ড।