গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের বাজারগুলোতে সরকার বেঁধে দেয়া দামে মিলছে না ডিম–ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি। আমদানি শুল্ক কমানোর প্রভাব নেই পেঁয়াজের দরেও। অন্যদিকে আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজিসহ বেশিরভাগ পণ্য। সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির তোয়াক্কা করছেন না ব্যবসায়ীরা। কোথাও কোথাও বেঁধে দেয়া দামে সোনালি মুরগি বিক্রি হলেও মিলছে না ডিম ও ব্রয়লার মুরগি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত সাড়ে ৪৭ টাকায় প্রতি হালি ডিম বিক্রির কথা থাকলেও, ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ৫৫ টাকা। আর বাজারভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। যা বেঁধে দেয়ার দামের চেয়ে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি। এদিকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি না হলেও কমছে না দাম। মুরগি ব্যবসায়ী জানান, ব্রয়লার ১৮০ টাকা বিক্রি করলে ১০/১২ টাকা লাভ হবে কেজিতে। আর সোনালি মুরগি বিক্রি করলে ১৫ টাকার মত করে লাভ থাকে। সরকার দর ঠিক করে দিলেও আড়ৎ থেকে কমে মুরগি কিনতে পারেন না বলেও জানান তারা।
এদিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত শুল্ক কমালেও বাজারে এর প্রভাব নেই। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। স্থিতিশীল আছে আলু, আদা–রসুনসহ অধিকাংশ মসলাজাতীয় পণ্য।
বাজারে আসা ক্রেতা জানান, পেঁয়াজ ১১০ টাকা করে কিনেছেন তারা। আর আলু কিনতে হচ্ছে ৫৫ টাকা করে। আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। তবে বেড়েছে কাঁচামরিচের দর। বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর গাজর ও টমেটোর প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতারা জানান, কিছুদিন আগে ঢেঁড়স ৩০ টাকা করে কেজি বিক্রি হয়েছে যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে। এদিকে জুলাইয়ের শেষে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এখনো বিক্রি হচ্ছে সেই আগের বাড়তি দরেই।
আসলে উৎপাদনকারী থেকে খুচরা ব্যবসায়ী কেউই মানছেন না বেঁধে দেয়া দাম। বরং আমিষ জাতীয় খাদ্যপণ্য দুটি আগের চেয়ে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এছাড়া দাম বেড়েছে প্রায় প্রতিটি পণ্যের। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। তাদের মতে, শুধু সরকার পরিবর্তন হলেই চলবে না, অতিমুনাফা করার মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে ব্যবসায়ীদের।
ক্রেতাদের অভিমত, সরকার বদলালেও বাজারের চিত্র বদলায়নি; অসাধুরা এখনও লুটে নিচ্ছে টাকা। তাঁরা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর কয়েক দিন দাম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারো সেই একই চিত্র। সরকার বদলালেও বদলায়নি বাজারের চিত্র। এখনও বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, দর বাড়ার ব্যাপারে খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে একপক্ষ দোষ চাপাচ্ছেন আরেক পক্ষের ওপর। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দর নির্ধারণের আগে সরকার কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেনি। উৎপাদন না বাড়িয়ে দর নির্ধারণ করলে তা বাস্তবায়ন হবে না। আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, যে কারণে বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে তারা বিক্রি করতে পারছেন না।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘সীমিত আয়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ। এরপরও যদি দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে, তাঁরা নিরুপায়। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সরকার অপেক্ষাকৃত কম দামে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে পারে। সেই সঙ্গে নিয়মিত বাজার তদারক করতে হবে, যাতে কেউ কারসাজির সুযোগ না পান।’
বাজারে পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া এবং সেটি কার্যকর না হওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। বিগত সরকারও দাম বেড়ে গেলে কিছু পণ্যের যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু বাজারে তা বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বড় বড় সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত উপদেষ্টারা যদি বাজার নিয়ন্ত্রণের মতো ছোট্ট বিষয়টির প্রতি একটু নজর দিতেন, তাহলে সীমিত আয়ের মানুষেরা একটু স্বস্তি পেতেন।
তাঁরা বলেন, দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা চার কোটি, অথচ উৎপাদন সক্ষমতা আছে সাড়ে চার কোটি। ৩০ লাখ ডিম কম উৎপাদিত হলেও তা চাহিদার চেয়ে বেশি। আবার ভারত থেকেও ডিম আমদানি করা হচ্ছে। তার পরও দাম বাড়ছে কেন? বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ডিম মজুদের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। মজুদ করে বাজারে ঘাটতি সৃষ্টি করা হয় এবং দাম বেড়ে গেলেই সেই ডিম ছেড়ে দেওয়া হয়। অনেক কোল্ড স্টোরেজেও ডিম মজুদ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। আলু, পেঁয়াজসহ আরো কিছু কৃষিপণ্য আছে, যেগুলোর নতুন ফলন পেতে এখনো অনেক সময় বাকি। সাধারণত ফাল্গুন–চৈত্র মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ফলে আগামী কয়েক মাস এই পণ্যগুলোর বাজার অস্থির করার জন্য বিভিন্ন সিন্ডিকেট নানা অপতৎপরতা চালাবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সচেতন থাকতে হবে। বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বাজারসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এসব পণ্যের আপৎকালীন ঘাটতি পূরণে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।