দৈনিক আজাদী সম্পাদক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক এম এ মালেক বলেছেন, সাংবাদিকতায় নীতি–নৈতিকতার কোনো বিকল্প নেই। মানুষের প্রতি বুকের একদম গভীরে টান রাখতে হয়। যে টান একজন সাংবাদিককে মানুষের কথা বলতে উৎসাহিত করে। আমার বাবা মরহুম আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের বুকের গভীরে সেই টান ছিল বলেই তিনি চট্টগ্রামের মানুষের কথা বলার জন্য দৈনিক আজাদী প্রকাশ করেছিলেন। আমি শুধু বাবার স্বপ্নটাই সযত্নে লালন করেছি।
টানা প্রায় ৬৫ বছর ধরে দৈনিক আজাদীকে সফলভাবে প্রকাশ করার জন্য ‘দৈনিক আজাদী পরিবার’ গতকাল শনিবার স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে এম এ মালেক এবং মিসেস কামরুন মালেককে সম্মাননা প্রদান করে। দৈনিক আজাদীতে কর্মরত সাংবাদিক, বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আজাদী সম্পাদক বলেন, অনেকেই দৈনিক আজাদীকে ঢাকা থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করে ‘জাতীয় পত্রিকা’ করে নেওয়ার পরামর্শ দেন। আমি চাইলে আগামী মাস থেকেই দৈনিক আজাদীকে ঢাকা থেকে প্রকাশ করতে পারি। কিন্তু আমি সেটি করিনি, করব না। আমি দৈনিক আজাদীকে ‘বিজাতীয় পত্রিকা’ হিসেবে রেখে চট্টগ্রামের কথা বলতে চাই। চট্টগ্রামের মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্নের কথা সরকারকে জানাতে চাই। চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে, চট্টগ্রামের মানুষের স্বার্থের কথা বাদ দিয়ে কোনোদিন কিছু করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার হয়নি।
সম্মাননার জবাবে এম এ মালেক বলেন, আমি এই পত্রিকার কোনো কর্মচারী বা সাংবাদিককে কোনোদিনই পর হিসেবে দেখিনি। সবাইকে আমি আমার পরিবারেরই সদস্য মনে করি। আমরা সবাই মিলেই আজাদী পরিবার। আমাদের সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় দৈনিক আজাদীর এই জয়যাত্রা। স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাই মিলে কাজ করেছি বলেই পত্রিকাটিকে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এবং চট্টগ্রামের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার পত্রিকায় পরিণত করতে পেরেছি। এই সাফল্য আমার একার নয়, আমাদের সবার।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ৬৫ বছর একটি কাজের সাথে লেগে থেকে আমি বিশ্বাস করি যে, কষ্ট এবং চেষ্টা থাকলে কোনো কাজই বৃথা যেতে পারে না। স্বপ্ন দেখতে হবে, চেষ্টা থাকতে হবে, কষ্ট করতে হবে। তাহলেই কেবল দয়ালু আল্লাহ সেই স্বপ্ন পূরণ করে দেন। আমি বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, আমি আমার স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলেছি। আসলে আমার স্বপ্ন ছিল বাবার পত্রিকাটিকে বাঁচিয়ে রাখা। সেটার জন্য যতটুকু কষ্ট করা দরকার তার সবই আমি করেছি। আমি বাবার পত্রিকাটি ৬৫ বছর টিকিয়ে রাখতে পেরেছি–এটাই আমার সান্ত্বনা, আমার স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলা।
এম এ মালেক বলেন, প্রত্যেক সফল মানুষের সাফল্যের পেছনে একজন নারীর ভূমিকা থাকে। আমি সফল হয়েছি কিনা জানি না। তবে আমার এই যে দীর্ঘ পথ চলা তা মসৃণ করতে, দৈনিক আজাদীকে বাঁচিয়ে রাখার আমার যে সংগ্রাম, তা কিছুটা সহজ করতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছে আমার স্ত্রী কামরুন মালেক। আমি আজ তার প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।
আজাদী পরিবারের পক্ষ থেকে মিসেস কামরুন মালেককেও সম্মাননা জানানো হয়। সম্মাননার জবাবে কামরুন মালেক বলেন, দৈনিক আজাদীই মালেক সাহেবের ধ্যান–জ্ঞান। রাতে চার–পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান তিনি। আর বাকি সময় এই পত্রিকা নিয়েই থাকেন। কী করে একটি ভালো সংবাদ করানো যায়, কী করে পত্রিকাটিকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করা যায়, কী করে মানুষের সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথাগুলো আরেকটু ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায়, এসবই তাঁর চিন্তা দখল করে থাকে।
তিনি বলেন, দৈনিক আজাদীকে এম এ মালেক সন্তানের মতোই ভালোবাসেন, লালন করেন। আর আপনারা যারা এখানে ওনার সহযোদ্ধা হিসেবে রয়েছেন, তাদের সবাইকেও তিনি সন্তান এবং স্বজনের মতোই ভালোবাসেন। আপনারা তাঁর এই ভালোবাসার প্রতিদান যে এভাবে দেবেন তা আমার কল্পনাতেও ছিল না। আপনাদের এই উদ্যোগ এবং ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
আজাদীর সহযোগী সম্পাদক কবি রাশেদ রউফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক, চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, সম্পাদনা সহকারী আ ব ম খোরশিদ আলম খান, আজাদীর কাপ্তাই প্রতিনিধি কাজী মোশাররফ হোসেন, অ্যাকাউন্টস বিভাগের সিনিয়র এঙিকিউটিভ ইমরান হোসেন, বিজ্ঞাপন ম্যানেজার ম্যাঙ্মি গোর্কি শীল টিপু, কম্পিউটার বিভাগের প্রধান মো. রকিবুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।