চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্তির রেশ না কাটতেই শুরু হয়েছে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা। সম্ভাব্য কমিটিতে পদ প্রত্যাশীরা শুরু করেছেন লবিং। সংগঠনের দায়িত্বশীলদের কাছে তদবির করতে গতকাল শনিবার অনেকে ছুটে গেছেন রাজধানী। বাদ নেই স্থানীয় নেতাদের কাছে ধর্ণা দেওয়াও। সংগঠনটির একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার দিবাগত মধ্য রাতে বিলুপ্ত করা হয় নগর যুবদলের সাংগঠনিক কমিটি। একইসঙ্গে বিলুপ্ত করা হয় মহানগরের আওতাধীন সবগুলো থানা ও ওয়ার্ড কমিটিও। কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত করা হয়েছে। শীঘ্রই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১ জুন কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল পাঁচ সদস্যের নগর যুবদলের কমিটি। এতে মোশাররফ হোসেন দিপ্তীকে সভাপতি এবং মো. শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। পরবর্তীতে একই বছরের ৪ অক্টোবর কমিটির আকার বৃদ্ধি করে ২৩১ সদস্যে উন্নীত করা হয়। দুই বছরের জন্য গঠিত ওই কমিটি ৬ বছর সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে। দায়িত্ব পালনকালে নগরের ১৫ থানা ও ১৭টি ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিলুপ্ত কমিটির পূর্বে ২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর কাজী বেলালকে সভাপতি ও মোশাররফ হোসেন দিপ্তীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের নগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সংসদ। তবে কমিটি ঘোষণার সাথে সাথেই চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরোধিতায় ওইদিন রাতেই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা এই কমিটি স্থগিত করতে নির্দেশ দেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে ১৯৯৬ সালে গঠিত কমিটি ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।
পদ প্রত্যাশীদের তৎপরতা : নতুন কমিটি বিলুপ্তির পর তৎপরতা শুরু করেছেন নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশীরা। এ রকম ৯ জনের তথ্য এসেছে আজাদীর কাছে। এর মধ্যে সভাপতি পদ প্রত্যাশীরা হচ্ছেন বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, সহসভাপতি ইকবাল হোসেন ও শাহেদ আকবর। এছাড়া নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজও সভাপতি পদের জন্য তদবির করছেন বলে জানা গেছে। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা হচ্ছেন বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি ফজলুল হক সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা ও বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম রাসেল। কেউ কেউ বলছেন, নতুন কমিটিতে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদকে আবারও একই পদে রাখা হতে পারে।
নগর যুবদলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন সাধারণ সম্পাদক পদের হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু চান্দগাঁওয়ে টার্ফ দখলের ঘটনার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
কী বলছেন সাবেক দুই নেতা : বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী আজাদীকে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। নিশ্চয়ই সংগঠনের ভালোর জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে যতদিন দায়িত্বে ছিলাম চেষ্টা করেছি সংগঠনকে এগিয়ে নিতে। থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি।
বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ আজাদীকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান আমাদের অভিভাবক। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটাই চূড়ান্ত। দায়িত্ব পালনকালে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি।
কী বলছেন পদ প্রত্যাশীরা : বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি সাহেদ আকবর আজাদীকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। বিগত আন্দোলন–সংগ্রামে যারা অ্যাকটিভ ছিলেন তাদের নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং যারা সক্রিয় ছিলেন না তাদের বাদ দেওয়া হবে। যাদের যোগ্যতা আছে তারাই নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসবেন। বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি–সাধারণ সম্পাদককে বহাল রেখেই নতুন কমিটি ঘোষণা করলে ভালো হবে। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই চূড়ান্ত। যদি মোশাররফ হোসেন দিপ্তীকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে সভাপতি করা হয় সেক্ষেত্রে আমিও সভাপতি হতে আগ্রহী।
এমদাদুল হক বাদশা আজাদীকে বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। মামলা–হামলার শিকার হয়েছি। সংগঠনের জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছি। আশা করছি দল মূল্যায়ন করবে।
ফজলুল হক সুমন আজাদীকে বলেন, বিগত সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম। অনেক মামলা–হামলার শিকার হয়েছি, পরিবারও হামলার শিকার হয়েছে। তাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, আমি মহানগর যুবদলের মূল দায়িত্বে থেকে সংগঠনের জন্য কাজ করি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় চাইলে সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে রাজপথের সহকর্মীদের নিয়ে সংগঠনের কাজ করতে চাই।
এইচ এম রাশেদ খান আজাদীকে বলেন, বর্তমানে যে পদে আছি সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে পূর্ণ মনোনিবেশ করছি। এরপরও দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে অন্য কোনো দায়িত্ব দেয় সেটাও পালন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
গাজী সিরাজ আজাদীকে বলেন, দীর্ঘদিন আন্দোলন–সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ মামলার আসামি হয়েছি এবং দীর্ঘ সময় কারাভোগও করেছি। দল নিশ্চই এ ত্যাগের মূল্যায়ন করবে। বিএনপি থেকে যুবদলের পদ প্রত্যাশা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, সাধারণত ছাত্রদলের পর যুবদলের রাজনীতি করা হয়। কিন্তু দল আমাকে বিএনপির দায়িত্ব দেয়। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। এখন দল উপযুক্ত মনে করে যুবদলের দায়িত্ব দিলে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চাই।
নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শেখ ইয়াসিন নওশাদ আজাদীকে বলেন, আশা করছি দ্রুত সময়ে যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হবে। যুবদলের নতুন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যাশা করেন বলেও জানান তিনি।