লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় হিজবুল্লাহ নেতার কড়া বার্তার পরই দেশটিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত বৃহস্পতিবার রাতের এ হামলা ইসরায়েল এবং লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘাত আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আরও বেড়ে গেছে। খবর বিডি/বাংলানিউজের।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের বিমান বাহিনী লেবাননে প্রায় ১০০টি রকেট লাঞ্চার ও অন্যান্য অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। সমপ্রতি এ হামলায় হতাহতের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহকে লড়াই থামিয়ে তাদেরকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জিন–পিয়েরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে ভীত ও উদ্বিগ্ন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে লেবানন ও সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা তারহীন যোগাযোগযন্ত্র পেজার ও ওয়াকিটকিতে একযোগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই বিস্ফোরণে অন্তত ৩৭ জন নিহত ও প্রায় তিন হাজার মানুষ আহত হন। বৃহস্পতিবার দিনশেষের অভিযানে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তাদের জঙ্গিবিমান দক্ষিণ লেবাননের শত শত রকেট–লাঞ্চার ব্যারেলে আঘাত হেনেছে। লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এনএএনএ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ৯টার পর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ৫২টিরও বেশি বোমা হামলা চালানো হয়। লেবাননের তিনটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, গতবছর অক্টোবরে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হিজবুল্লাহর ওপর হামলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছে, বৃহস্পতিবার সারা দেশে তারা প্রায় ১০০টি রকেট লাঞ্চার ও দক্ষিণ লেবাননের অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ বৃহস্পতিবারেই এক টিভি ভাষণে কড়া জবাব দেন।
তিনি বলেন, মঙ্গল ও বুধবার সিরিজ বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ‘সব ধরনের সীমা’ লঙ্ঘন করেছে। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শত্রুরা সব নিয়ন্ত্রণ, আইন ও নৈতিকতার বাইরে চলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ হামলা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল।
ইসরায়েলকে কড়া জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি ইরানের : এদিকে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কমান্ডার হোসেইন সালামি হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসারাল্লাহকে বলেছেন, প্রতিরোধ অক্ষ থেকে থেকে ইসরায়েল কঠোর জবাব পাবে। হিজবুল্লাহর ওপর আগের দুদিন ধরে চালান নজিরবিহীন পেজার ও ওয়াকি–টকি হামলার পর বৃহস্পতিবার সালামি এমনটি বলেন। হামলায় ৩৭ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন দুই হাজার ৯০০ এরও বেশি মানুষ। একসঙ্গে অনেক ডিভাইসে বিস্ফোরণে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
প্রতিরোধ অক্ষে রয়েছে, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি ও ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। এদের সবাই ইরান সমর্থিত। মঙ্গলবার ও বুধবারের হামলায় লেবানন ও হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে দোষারোপ করছে। ইসরায়েল এ নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সম্ভবত এসব হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। সালামি তার বার্তায় নাসরাল্লাহকে বলেন, এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে ইহুদিবাদী শাসনের (ইসরায়েল) হতাশা এবং ধারাবাহিক ব্যর্থতার ফল। শিগগিরই প্রতিরোধ অক্ষ থেকে কঠিন জবাব পাবে। আমরা এ রক্তপিপাসু ও অপরাধী শাসনের ধ্বংস প্রত্যক্ষ করব।