শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত সহউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে ‘শপথ’ পাঠ করিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সমন্বয়করা। শপথ পাঠের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির সহউপাচার্য মো. সাজেদুল করিম বলেন, এটি পরিকল্পিত কোনো শপথবাক্য পাঠ না। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো পরিবেশটি হয়ে পড়ে শোকাবহ। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ক্ষোভ, দেশের চলমান প্রেক্ষাপট, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চ প্রত্যাশা ও নতুন প্রশাসন আসায় অতিমাত্রায় আবেগে আপ্লুত হওয়া ইত্যাদি পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ বাক্যগুলো সবার মুখে উচ্চারিত হয়েছে। ঘটনাটি যেভাবে সমালোচিত হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এমনটি নয়। খবর বিডিনিউজের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শাখা জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহউপাচার্য মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসেন যোগদান করেন। পরে বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলনকক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক দল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা। এর এক পর্যায়ের সহউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।
সন্ধ্যার দিকে শপথবাক্য পাঠ করানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা করতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সম্মেলন কক্ষে দাঁড়িয়ে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ বখতিয়ার। সহউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকেও ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে শপথ উচ্চারণ করতে শোনা যায়।
শপথবাক্য পাঠের সময় পলাশ বখতিয়ারের সঙ্গে সহউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে বলতে শোনা যায়, মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া যে, আমরা ছাত্র–জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের করাল গ্রাস থেকে মুক্তিলাভ করেছি। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোভিসি ও ট্রেজারার পদে যোগদানের মুহূর্তে ২৪ জুলাইয়ের সকল শহীদদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। মহান জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আমরা শপথ করছি যে, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক যে দিক–নির্দেশনা আমরা পেয়েছি এবং জুলাইয়ের ছাত্র–জনতার বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা এবং গবেষণা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সচেষ্ট থাকব। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ও শিক্ষার্থী বান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আপোষহীনভাবে নিয়োজিত থাকব। আমাদের বিদ্যা, গবেষণা সৎ কাজের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি দেশের জনগণের এবং বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখাতে যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আব্দুল কাদির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সালেহ মো. নাসিম, দেলোয়ার হোসেন শিশির, মাহবুবুল ইসলাম পবন, রিয়াজ হোসেন রিমন, জহিরুল ইসলাম, হাফিজুল ইসলাম, আজাদ শিকদার, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী কিরণ হাওলাদার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সমালোচনা করে আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, সম্মানিত শাবিপ্রবি শাখার সমন্বয়ক মহোদয়গণ এই সময় শপথবাক্য পাঠ করানোর কাজে অনেক ব্যস্ত। তারা সময় করে প্রথমে শিক্ষকদের এবং পরে শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। পরবর্তীতে টং, অটোওয়ালা মামারা, দারোয়ান, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। ও আচ্ছা, ভুলে গিয়েছিলাম, নতুন ভিসি স্যারকেও শপথ নিতে হবে সম্মানিত মহোদয়দের কাছ থেকে।
এমডি শাহরিয়ার নামে আরেক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, শাবিপ্রবি প্রো–ভিসি এবং ট্রেজারারকে শপথ পাঠ করাচ্ছে। এর থেকে হাস্যকর এবং লজ্জাজনক ঘটনা হতেই পারে না!! আপনারা ত সৌজন্য সাক্ষাৎ করেও নিজেদের দাবির ব্যাপারে স্যারদের অনুরোধ করতে পারতেন!! তাই না?
এ বিষয়ে সমন্বয়ক দলের পক্ষ থেকে শপথবাক্য পাঠক ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক ও থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার বলেন, গতকাল নবনিযুক্ত উপ–উপাচার্য ও ট্রেজারার স্যারের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জুলাই বিপ্লবের কথা স্মরণ করে আমরা অনেকে বক্তব্য দিই এবং তারই ফলশ্রুতিতে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে ধরে রাখতে স্যারদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে অনুরোধ করি। শিক্ষকরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, শিক্ষকদের অসম্মান হোক এটা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা স্যারদের কাছে এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও স্যারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার দুপুরে শপথবাক্য পাঠের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব এক বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, গতকালের বিষয়টি আনুষ্ঠানিক কোনো শপথ অনুষ্ঠান ছিল না। এটি নতুন প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় ছিল। মতবিনিময়ে শহীদদের আত্মত্যাগ এবং জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধরে রাখতে স্যারদের কাছে কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার বিষয় উঠে আসে। যে ভিডিওটা সামনে এসেছে এটি জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা ছিল। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমাদের উদ্দেশ্যকে আরও সুন্দর এবং যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে না পারার কারণে মূলত এ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।