চট্টগ্রামের ৩২ উপজেলায় ভোটার হওয়ার শর্ত শিথিল

দীর্ঘদিনের বিড়ম্বনার অবসান, কমবে ভোগান্তি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৪:১৯ পূর্বাহ্ণ

ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমছে চট্টগ্রামের ৩২ উপজেলার নাগরিকদের। ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে চট্টগ্রামের ৩২টি উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ কমিটি গঠন করে ইসি। বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ভোটার তালিকায় নিজ নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারণেই গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চট্টগ্রামের অঞ্চলের ৩২ উপজেলার (নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বিশেষ এলাকা ঘোষিত) স্থানীয় নাগরিকদের। চট্টগ্রাম অঞ্চলের এই ৩২ উপজেলার নাগরিকদের ভোটার হতে যথাযথ ডকুমেন্ট দিলেও বিশেষ কমিটির ছাড়পত্র ছাড়া ভোটার তালিকায় নাম উঠানো সম্ভব হয় না।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এক পরিপত্রের মাধ্যমেচট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২ উপজেলায় ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ এলাকার যেসব নাগরিকের অ্যাকাডেমিক সনদ বা বৈধ কাগজপত্র আছে, তাদের সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের মতো একই ক্যাটাগরিতে না ফেলে তাদের ভোটার নিবন্ধন সহজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শর্ত শিথিলের ফলে এই নির্দেশনার মধ্য দিয়ে বিশেষ কমিটির বেড়াজাল থেকে চট্টগ্রামবাসীকে মুক্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইসির এই সিদ্ধান্ত প্রচারের জন্যও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে না পারে, সেজন্য ভোটার তালিকা করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এই বিশেষ এলাকার জন্য বিশেষ কমিটির মাধ্যমে নিবন্ধন ফরম যাচাইবাছাই করা হয় এবং রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক সংবলিত ডাটাবেজও ব্যবহার করা হয়। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নতুন সচিব শফিউল আজিম দায়িত্ব নেয়ার পর গত সপ্তাহে এক প্রজ্ঞাপনে এ অঞ্চলের স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তি কমিয়ে দিয়েছেন। ইসি সচিব ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ এলাকার যেসব নাগরিকের অ্যাকাডেমিক সনদ বা বৈধ কাগজপত্র আছে, তাদের সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের মতো একই ক্যাটাগরিতে না ফেলে তাদের ভোটার নিবন্ধন সহজ করা হয়েছে। বিশেষ কমিটির বেড়াজাল থেকে চট্টগ্রামবাসীকে মুক্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইসির সিদ্ধান্ত প্রচারের জন্যও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে প্রণীত সুপারিশগুলো কমিশন কর্তৃক অনুমোদনক্রমে নতুন পরিপত্র জারি করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ভোটার এলাকার জনগণকে জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, চট্টগ্রাম জেলা, কক্সবাজার জেলা এবং তিন পার্বত্য জেলা নিয়েচট্টগ্রাম অঞ্চল। এই চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বাচন কমিশনের ৫৬ থানা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস রয়েছে। এরমধ্যে ৩২ উপজেলাকে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এক পরিপত্রে ৩২ উপজেলার বিশেষ এলাকার তালিকা শিথিল করা হয়েছে। ৩২টি বিশেষ এলাকা বা উপজেলার নাগরিকদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি আরও সহজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন ইসি সচিব।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, রোহিঙ্গারা এদেশে প্রবেশের পর থেকেই এই ৩২টি উপজেলার নাগরিকদের ভোটার হতে বিশেষ কমিটির ছাড়পত্রের প্রয়োজন হতো। কমিটির ছাড়পত্র ছাড়া ৩২ অঞ্চলের কেউই ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারতো না। এখন নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এই বিশেষ এলাকার নতুন ভোটার যারা হবেন তাদের এসএসসি সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে ভোটার করা যাবে। আগের বিশেষ এলাকার শর্ত শিথিল করা হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে চট্টগ্রামের ৩২টি উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ কমিটি গঠন করে ইসি। ওইসময় প্রত্যেক উপজেলায় ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তবে গত বছর ১৫ সদস্যের আগের কমিটিকে ১২ সদস্যে নামিয়ে আনে ইসি। গত বছর ইসির পুনর্গঠিত ১২ সদস্যের কমিটিতে রাখা হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তার অবর্তমানে উপপরিদর্শক (এসআই) সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার নিচে নয়), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), হেডম্যান (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে) অথবা কারবারি (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে), সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র অথবা প্যানেল মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা প্যানেল চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাচন অফিসার (সংশ্লিষ্ট উপজেলা)

বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন ইউএনও আর সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক ওই কাজ দ্রুত সম্পন্নের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলার এক বা একাধিক কর্মকর্তাকে কমিটিতে কোঅপ্ট করতে পারবেন। এছাড়াও, সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বনামধন্য শিক্ষক, বিশিষ্ট নাগরিক, সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যদেরকেও কমিটিতে কোঅপ্ট করতে পারবেন।

চট্টগ্রামের ৩২ উপজেলায় ভোটার করতে কমিটি যেসব কাজ করে থাকে () কমিটি প্রতিমাসে ন্যূনতম একটি সভা অনুষ্ঠান করবে, প্রয়োজনে একাধিক সভা অনুষ্ঠান করবে। কমিটি বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সকল জাতীয় পরিচয়পত্রের এনআইডি নম্বরসমূহ অনলাইনে যাচাই করবে। যাচাইয়ের সময় নিম্নলিখিত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে– () ভাই/বোনের ডাটাবেজে পিতা/মাতার নামের সাথে আবেদনকারীর উল্লিখিত পিতা/মাতার নামের মিল থাকতে হবে। () চাচা/ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সাথে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে। () প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি/তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এই জটিল শর্তের কারণে এই অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দারা ভোটার হতে গেলে নানান শর্তের বেড়াজালে আটকে নানান বিড়ম্বনায় পড়তেন। নির্দিষ্ট সময়ে ভোটার হতে পারতেন না। এই নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভঅসন্তোষ চলে আসছে গত ৫ বছর ধরে। এই দীর্ঘ বিড়ম্বনার অনেকটা অবসান হতে চলেছে। বিশেষ এলাকার শর্ত শিথিল করার কারণে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভেসে গেলেন স্বামী, বেঁচে গেলেন স্ত্রী সৈকতে অসতর্কতায় লাশ হচ্ছেন পর্যটক
পরবর্তী নিবন্ধসারা দিন অসহনীয় গরম, সন্ধ্যায় স্বস্তির বৃষ্টি