লেবাননে যোগাযোগের জন্য হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা পেজার বিস্ফোরণে এক শিশুসহ অন্তত আটজন নিহত ও আরও ২৭৫০ জন আহত হয়েছেন, জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহতদের মধ্যে লেবাননে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতও আছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুত ও আরও বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহতের অনেকেই হিজবুল্লাহর যোদ্ধা। এসব বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায় দিয়েছে লেবাননের এ সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। খবর বিডিনিউজের।
ইরানের সমর্থন পাওয়া গোষ্ঠীটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যে পেজারগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেগুলো হিজবুল্লাহর বিভিন্ন ইউনিট ও ইনস্টিটিউশনের কর্মীরা ব্যবহার করতো। এসব বিস্ফোরণে তাদের অন্তত দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। কী কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হিজবুল্লাহ এইসব বিস্ফোরণকে ‘অপরাধমূলক আগ্রাসন’ অভিহিত করে এর জন্য ইসরায়েল ‘উপযুক্ত শাস্তি’ পাবে বলে জানিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারি এই পেজার বিস্ফোরণের নিন্দা করে বলেছেন, এটি ইসরায়েলের একটি আগ্রাসন।
গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবানন–ইসরায়েল সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনী পরস্পরের বিরুদ্ধে গোলাগুলি বর্ষণ করে আসছে, এতে ওই অঞ্চলজুড়ে বড় ধরনের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, এই ‘অস্থির’ পরিস্থিতিতে এ ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
যোগাযোগের জন্য হিজবুল্লাহ ব্যাপকভাবে পেজারের ওপর নির্ভরশীল। এই গোষ্ঠীটি তাদের সদস্যদের মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে, কারণ সেটি হ্যাকারের খপ্পরে পড়তে পারে অথবা ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী সেগুলো ট্র্যাক করতে পারে।
হিজবুল্লাহর তথ্য অনুযায়ী, লেবাননের স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে একাধিক জায়গায় অনির্দিষ্ট সংখ্যক পেজার বিস্ফোরিত হয়।
সিসিটিভির এক ভিডিওতে দেখা গেছে, সুপারমার্কেটে এক ব্যক্তির ব্যাগে বিস্ফোরণ ঘটছে। বিস্ফোরণের পর ওই ব্যক্তিকে পেছন দিকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখা যায় আর তার কাতর চিৎকার শোনা যায়, আশপাশে থাকা অন্য ক্রেতারা আড়াল নেওয়ার জন্য দৌড় দেন। লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাজ আবিয়াদ জানিয়েছেন, আহতের অধিকাংশই মুখে, হাতে ও পাকস্থলিতে আঘাত পেয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈরুতে ইরানের রাষ্ট্রদূত মোজতবা আমানি এ ধরনের একটি বিস্ফোরণে হালকা আঘাত পেয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দেওয়া বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, এই অপরাধমূলক আগ্রাসনের জন্য শত্রু ইসরায়েলকে পুরোপুরি দায়ী বলে ধরছি আমরা।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এসব বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেছেন, ইসরায়েল লেবাননের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটিয়েছে এবং যে কোনো বিবেচনায় এটি একটি অপরাধ।
কী কারণে পেজারগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে তা নিয়ে কিছু বলেনি হিজবুল্লাহ। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক এক যুদ্ধাস্ত্র বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে জানিয়েছেন, পেজারগুলোতে সম্ভবত ১০ থেকে ২০ গ্রামের মতো উচ্চ সামরিক মানের বিস্ফোরক ভরা ছিল, এগুলো একটি ভুয়া ইলেকট্রনিক উপাদানের মধ্যে লুকানো ছিল।
আলফানিউমেরিক টেঙট বার্তা দিয়ে ওই ইলেকট্রনিক উপাদানটি সজ্জিত ছিল, যে ব্যক্তি ওই পেজারটি ব্যবহার করতে গিয়েছে তখনই বিস্ফোরণ ঘটেছে, বলেন এই বিশেষজ্ঞ।