দ্রুত নির্বাচনমুখী সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন

নগরে বিএনপির সমাবেশে সালাউদ্দীন আহমেদ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো রাজনীতি চলবে না

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

যত দ্রুত সম্ভব গণতান্ত্রিক নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, নির্বাচনমুখী যাবতীয় জরুরি সংস্কার করার দায়িত্ব এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আছে। কিন্তু সকল সংস্কার বাস্তবায়নের দায়িত্ব একমাত্র নির্বাচিত সরকারের। সুতরাং নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। আপনারা সংবিধান সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু সেই সংবিধান সংশোধন করবে নির্বাচিত পরবর্তী পার্লামেন্ট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের আহ্বান জানাই, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনমুখী সংস্কার সাধন করুন এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। তাহলে এদেশের মানুষ আশ্বস্ত হবে, বাংলাদেশ সত্যিই প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নগরের আলমাস মোড়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি আয়োজিত ‘গণতন্ত্রের শোভাযাত্রা’ পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রাটি কাজীর দেউড়ী, লাভলেইন, জুবিলি রোড, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী হয়ে লালদিঘি পাড়ে এসে শেষ হয়।

শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।

যতদিন পর্যন্ত এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবার ঘোষণা না দেয়, ততদিন আন্দোলন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সালাউদ্দীন আহমেদ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, সবাই ধৈর্য্য ধরুন, সবাই সুশৃঙ্খল থাকুন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম জারি রাখুন।

তিনি বলেন, এত রক্ত, এত ঘাম, এত প্রাণ, এত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি বাংলাদেশে নতুন স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশের নতুন গণতন্ত্র দিবস। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু গণতন্ত্র, এই নতুন স্বাধীনতা, এই বিজয়কে যদি আপনারা অর্থবহ করতে চান তাহলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আন্দোলন জারি রাখতে হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করতে হবে। সুতরাং যতদিন সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন এ আন্দোলন চালু রাখতে হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যতদিন পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, সংসদ প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথে এ আন্দোলন অব্যাহত রাখব।

সরকার পতন আন্দোলনে বিএনপির অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনারা যদি মনে করেন সবকিছু এমনি এমনি এসেছে সেটা ভুল। এ গণঅভ্যুত্থানে ও গণবিপ্লবে বিএনপির ৪২২ নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে ১১৩ জনের বেশি ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে প্রায় ২৭০০ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে শত শত মানুষ বিএনপির নেতাকর্মী। এই স্বাধীনতা, এই গণতন্ত্রের জন্য যারা যুদ্ধ করেছে, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম শহিদ রংপুরের সাঈদ, দ্বিতীয় শহিদ চট্টগ্রামের চকরিয়ার পেকুয়ার সন্তান, আমার সন্তান ওয়াসিম। সমস্ত গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, আন্দোলনে, যুদ্ধে চট্টগ্রাম সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যাকারীর আর কোনোদিন জায়গা হবে না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের এবং গণহত্যাকারীদের কোনো রাজনীতি চলবে না। যদি গণহত্যাকারীদের রাজনীতি চলে তাহলে বাংলাদেশ আবার পরাধীন হবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের এখানে তাঁবেদারি চলবে না। যদি সত্যিকারভাবে স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, সাম্যভিত্তিক একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, যদি আইনের শাসনের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, তাহলে শহিদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাদের পরস্পরের অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি দিতে হবে। কেউ আইনের চেয়ে বড় নন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন আমরা করেছিলাম। সেই কেয়ারটেকার সরকার বিলুপ্ত করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নতুনভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রবর্তন করে। দীর্ঘ ১৬ বছরের অন্তঃহীন সংগ্রাম, ত্যাগ তিতিক্ষা, রক্ত, শ্রম এবং প্রাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, বিগত ১৭ বছর নির্যাতনের পরও বিএনপিকে স্তব্ধ করতে পারেনি। আগামী ১৭ বছর চেষ্টা করলেও পারবে না। রাত যত গভীর হয় ভোর তত নিকটে আসে। আওয়ামী লীগ মনে করেছিল ভোর বুঝি আর হবে না। কিন্তু সকাল ঠিকই হয়েছে। শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। শেখ হাসিনা মাবোনদের জন্য কলঙ্ক। হাসিনার মতো স্বৈরশাসক ইতিহাসেও খুঁঁজে পাওয়া যায়নি। তাই বলে আমাদের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের কেউ যেন আশ্রয় না পায়। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেক টাকা। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

আবুল খায়ের ভূইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে জবরদস্তির শাসন কায়েম করেছিল। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিতদের শাসন ফিরিয়ে আনাই হবে রাষ্ট্রের বড় সংস্কার।

জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পর গণতন্ত্রের পথে নতুন করে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রের অতি জরুরি কিছু সংস্কার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ ও সরকার গঠন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। উন্নয়ন যেমন গণতন্ত্রের বিকল্প নয়, তেমনি সংস্কারও ভোটের বিকল্প নয়।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, সাম্প্রতিক পোশাক শিল্পে অস্থিরতার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা দায়ী। ছাত্রজনতার আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মী। বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা করা যায় না। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার বিচার এদেশের মাটিতে হবেই।

মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বর্তমান সরকার হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের পর বিপ্লবের মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। তবে আওয়ামী লীগ সরকার যে জঞ্জাল সৃষ্টি করে গেছে সেটাকে দূর করে একটি সঠিক সুন্দর নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দিয়েছে। তার শাসনামলে এই জাতিকে সে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণে আবদ্ধ করে গেছে। পাচার হয়ে গেছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। দুঃশাসনে সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়েছে। আমরা আশা করব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দেবে।

এরশাদ উল্লাহ বলেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। দেশ আজকে একটি নবতর স্বাধীনতা পেয়েছে। একবার আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পেয়েছি। আর এবার সত্যিকার অর্থে ৫ আগস্ট নতুন প্রজন্ম দেখতে পেল স্বাধীনতা কাকে বলে। গণতন্ত্রের যাত্রা পথের মুক্তিকে সমুন্নত রাখতে হবে।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কঙবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহগ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সদস্য সাচিং প্রু জেরী, জালাল উদ্দীন মজুমদার, মশিউর রহমান বিপ্লব, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দিপেন তালুকদার দিপু, উত্তর জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, কঙবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. আবদুর রহমান ও বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা।

উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল, সরওয়ার জামাল নিজাম, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি ও রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না : তারেক
পরবর্তী নিবন্ধডেঙ্গুতে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু