সরকার পতনের পর থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বেশিরভাগ কাউন্সিলর আত্মগোপনে থাকায় নাগরিকরা বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির সাবেক কাউন্সিলররা। তারা বলছেন, কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে জন্ম–মৃত্যু, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিক সনদপত্রসহ বিভিন্ন সেবা পাচ্ছেন না। নাগরিক সেবা নিশ্চিতে যেসব কাউন্সিলর অনুপস্থিত রয়েছেন তাদের বিষয়ে ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নেয়ারও আহ্বান জানান তারা। এ সময় সাবেক কাউন্সিররা ২০১০ সালের নির্বাচনের পর যেসব মেয়র ও কাউন্সিলর দায়িত্ব পেয়েছেন তারা প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নন বলেও দাবি করেন।
গতকাল চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত ১৪ জন কাউন্সিলর সাক্ষাৎ করে এ দাবি করেন। নিয়াজ মুহাম্মদ খানের নেতৃত্বে আসা সাবেক কাউন্সিলররা সম্প্রতিক বর্ষণে নগরে ক্ষতি হওয়া সড়ক দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানান। চসিকের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেসব ঠিকাদারকে নিয়োগ করার পরও কাজ করছে না তাদের কাছ থেকে কাজ আদায়ের তাগাদা দেন। প্রয়োজনে চাপ প্রয়োগের পরামর্শ দেন। অন্যথায় পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রস্তাব দেন। এছাড়া অনেক রাস্তায় সড়কবাতি ঠিকভাবে জ্বলে না দাবি করে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, সাবেক কাউন্সিলররা দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এসেছেন বলে মনে হয়েছে। তারা অনেক সহযোগিতামূলক কথাবার্তা বলেছেন। তারা বলেছেন, সড়কবাতিগুলো যেন ঠিকমত জ্বলে এবং বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া রাস্তাঘাট যেন মেরামত করা হয়। মানুষ যাতে নাগরিক সেবা পায় সেটা আমাদের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করতে বলেছেন তারা।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চসিকের সর্বশেষ নির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে অপসারণ করে। তার স্থলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়া। তবে কাউন্সিলরদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি মন্ত্রণালয়। এদিকে ২৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চসিকের একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চসিকের ৩৯ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস করছেন না। বাকি ১৬ কাউন্সিলরের মধ্যে ৭ জন অফিস করলেও অনিয়মিত। নিয়মিত অফিস করছেন মাত্র ৮ জন। তবে এরা সবাই সংরক্ষিত কাউন্সিলর।
এদিকে চসিকের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাবেক কাউন্সিলরা চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের মতামত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সাবেক কাউন্সিলরগণ বলেন, ২০১০ সালের পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এজন্য ২০১০ সালের নির্বাচনের পর যেসব মেয়র ও কাউন্সিলর দায়িত্ব পেয়েছেন তারা প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নন। এজন্য তারা নাগরিকদের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। ৫ আগস্ট এর পর নাগরিকরা বিভিন্ন সেবাবঞ্চিত হয়ে ২০১০ ও এর আগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এজন্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন চাইলে ২০১০ সালের চসিক নির্বাচন পর্যন্ত যেসব কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মতামত নেয়া প্রয়োজন। সাবেক কাউন্সিলররা চট্টগ্রামের উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
সাবেক কাউন্সিলররা বলেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক কাউন্সিলর কার্যালয় উপস্থিত না হওয়ায় নাগরিকরা বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। জন্ম–মৃত্যু, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিক সনদপত্র সহ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। এজন্য কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে কাউন্সিলরদের ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাক্রমে চসিকের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিলে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়িয়ে তাদের দায়িত্বাধীন ওয়ার্ডের সংখ্যা কমালে নাগরিকদের সেবা পেতে সুবিধা হবে।
সাবেক কাউন্সিলরা বলেন, সামপ্রতিক ক্রমাগত বৃষ্টিতে নগরের রাস্তা ভেঙে নগরবাসী প্রচন্ড কষ্টে আছেন। সিটি কর্পোরেশনের দ্রুত সড়কগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন। জলাবদ্ধতাসহ ভাঙা সড়কের জন্য ২৩ নং পাঠানটুলি ওয়ার্ড ও ২৬ নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের নাগরিকরা সীমাহীন ভোগান্তিতে আছেন। এছাড়াও নগরীর প্রধান সড়ক সহ অলিগলির সড়ক বাতিগুলো জ্বালানোর বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। তারা নগরবাসীর যাবতীয় ভোগান্তি নিরসনে চসিককে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
জবাবে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আপনাদের মাধ্যমে নগরবাসীর সমস্যাগুলো আমরা জেনেছি। এগুলো সমাধানে আমরা যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নিব।
এ সময় সাবেক কাউন্সিলর শামসুল আলম, এম.এ মালেক, দিদারুর রহমান লাভু, মো. তৈয়ব, মোহাং ইয়াছিন চৌধুরী আশু, মোহাম্মদ ইসমাইল, আবদুস সাত্তার সেলিম, জয়নাল আবেদীন, মো. আবুল হাশেম, নাজিম উদ্দিন আহমদ, মাহাবুবুল আলম ও হাসান লিটন উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎ এর বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়াজ মোহাম্মদ খান আজাদীকে বলেন, কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতির কারণে এলাকার মানুষ জন্মনিবন্ধন ও জাতীয়তা সনদসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা পাচ্ছে না। বিষয়গুলো সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহীর দৃষ্টিতে এনেছি। এক্ষেত্রে যে সব কাউন্সিলর অনুপস্থিত আছেন তাদের বিষয়ে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে এলাকাবাসীর সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। তখন প্রধান নির্বাহী আমাদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, যেসব কাউন্সিলর অনুপস্থিত আছেন সেখানে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় সনদগুলো ইস্যু করবেন।
তিনি বলেন, বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন জায়গার রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক সড়কে ছোট–বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়টি আমরা তুলে ধরেছি। তখন কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলৗসহ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। একইভাবে অনেক জায়গায় সড়কবাতি জ্বলছে না। যেখান থেকে লাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেখানে অনেকে ইচ্ছে করে কাজ করে না বলে আমরা জানিয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
নিয়াজ মোহাম্মদ খান আজাদীকে বলেন, আমরা বলেছি, আপনারা নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যান। আমাদের পক্ষ থেক সবধরনের সহযোগিতা থাকবে। এছাড়া ইতোমধ্যে যেসব উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু কাজ করেনি সেসব ঠিকাদারকে প্রয়োজনে চাপ দিয়ে কাজ আদায় করার প্রস্তাব দিয়েছি।