বছর পরিক্রমায় ফিরে এলো মহিমান্বিত রবিউল আউয়াল মাস। এই মাসের ১২ তারিখে ধরণীকে আলোকিত করে তশরিফ আনেন মানবতার নবী রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবী প্রেমী লাখো জনতা আজ জেগেছে আবার। ঈমানী উদ্দীপনা নিয়ে রাজপথে হেঁটে হেঁটে প্রিয় নবীর (দ.) প্রতি তাজিম ও শ্রদ্ধা জানানোর দিনটি বছর ঘুরে আবারো ফিরে এলো। বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মানে চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। আজিমুশ্বান জশনে জুলুসে আজ শামিল লাখো লাখো নবীপ্রেমী সুন্নি জনতা। বছরের এই ১২ রবিউল আউয়াল তথা মহিমান্বিত দিনটির অপেক্ষায় থাকেন সুন্নি জনতা। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) সারা বিশ্বে মুসলিম জনপদে নানা আয়োজনে বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় উদ্যাপিত হলেও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে আওলাদে রাসূল (দ.) গাউসে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (ম.জি.আ.) এর নেতৃত্বে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার ব্যবস্থাপনায় ঢাকা–চট্টগ্রামে বিশ্বের বৃহত্তর জশনে জুলুসের দিকেই বিশ্বের দৃষ্টি। তবে এ বছর গাউসে জমান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ) আসছেন না। তাঁর স্থলে ঢাকা–চট্টগ্রামে জশনে জুলুসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পীরে বাঙাল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ)। বিশ্ব মিডিয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের টপ নিউজের অভিধা পেয়েছে কুতুবুল এরশাদ হাদীয়ে মিল্লাত আওলাদে রাসূল (দ.) আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রহ.) এর নির্দেশ অনুসৃতির স্মারক এ জশনে জুলুছ। ৯ই রবিউল আউয়াল ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরীয়া তৈয়বিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে জশনে জুলুসের বড় জমায়েত ঘটে। এশিয়া খ্যাত শিক্ষালয় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার বিশাল ময়দানে জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবীর (দ.) মূল জমায়েতে নবীপ্রেমী জনতার উচ্ছ্বাস উদ্দীপনার কোনো তুলনাই হয় না। চট্টগ্রাম–ঢাকায় জশনে জুলুসে আসা লাখো লাখো নবীপ্রমিক আশেক জনতা আছড়ে পড়ে জামেয়া ময়দানে। আওলাদে রাসুল (দ.)’কে এক নজর দেখতে আশেক জনতার ব্যাকুলতা হৃদয়োচ্ছ্বাস তা চোখে দেখলে আঁচ করা যায়–প্রিয় নবীর (দ.) আওলাদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা কতো গভীরে। হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ (ম.জি.আ.) নবীপ্রেমী জনতার উজ্জীবনের মূল প্রেরণা জশনে জুলুসের এ বছর ছদারত করবেন। প্রিয় নবীর (দ.) পবিত্র শোণিতধারা হুজুর কেবলার পেছনে নামাজ আদায় করতে এবং তাঁকে এক নজর দেখে অন্তর জুড়াতে প্রতিদিন ঢল নামে আলমগীর খানকা শরীফসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত মাহফিলসমূহে। নাজাতের জিন্দেগীর সন্ধানে সাফল্য ও কামিয়াবির পথে ভক্ত মুরিদদের প্রতিনিয়ত উদ্দীপ্ত রাখছেন আওলাদে রাসুল (দ.) আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (ম.জি.আ.)। পুরুষ আশেক–জনতার পাশাপাশি বিপুল নারী সমাজকে সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ায় দীক্ষিত করে হুজুর কেবলা দ্বীনি মুবাল্লিগের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
দীর্ঘ খরার পর বসন্তের আগমনে প্রকৃতি যেভাবে সতেজ হয়ে ওঠে তেমনি মাহে রবিউল আউয়ালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আওলাদে রাসূলের (দ.) অংশগ্রহণে আজিমুশশান জশনে জুলুস শান মর্যাদা অনুভব–আবেদনে আদতেই আজিমুশ্বানের চেয়েও বাড়তি কিছু নবীপ্রেমিকদের কাছে। হকপন্থী এবং বাতিলের অস্তিত্ব সবখানে। ইতিহাসও বলে– বাতিলরা আছে, থাকবেই। অথচ ঈদে মিলাদুন্নবীর ‘সবছে আ’লা ওয়ালা হামারা নবী–সবছে বালা ওয়ালা হামারা নবী’– জশনে জুলুছের এই উচ্চরব নবীবিদ্বেষী ইসলাম বিকৃতকারীদের দুর্গ খান খান করে দেয়। সারা বছরের বদ আক্বীদার সঞ্চিত সওদা ‘জশনে জুলুসের’ টর্নেডোতে যেন খড়কুটোর মতো হাওয়ায় মিলে যায়। বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার ইসলামাবাদ তথা চট্টগ্রামের জমিনে এবং পরবর্তীতে ঢাকাসহ দেশের সকল জেলা, থানা–গ্রামে জশনে জুলুসের প্রসারতায় উজ্জীবিত এই দেশ, এই দেশের শান্তিকামী দ্বীনদার সত্যনিষ্ঠ কোটি মানুষ। দিনে দিনে জশনে জুলুস পেয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সেরা ইসলামী কৃষ্টি–সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে। দেশে যারা এক সময় জশনে জুলুসের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা বুঝতে চায় নি বা বুঝেনি তারাও আজ ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) দিবসে বিশাল জশনে জুলুস আয়োজনে অনেক দূর এগিয়েছে। আওলাদে রাসূলের (দ.) কাজের বড় সার্থকতা–সাফল্য এখানেই।
গাউসে জমান আওলাদে রাসূল (দ.) আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রহ.) জমানার বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ বা ধর্মীয় সংস্কারক হিসেবে আজ বিশ্বনন্দিত। অবক্ষয়তাড়িত অনৈতিকতা আশ্রয়ী বিকৃত সংস্কৃতির জোয়ারে নৈতিক চরিত্র বিকাশের ইসলামী সংস্কৃতি আজ হুমকির মুখে। মানুষের চিন্তায়–বোধে, কর্মে অনুকূল পরিবর্তন আনাই হচ্ছে সত্যিকার সংস্কৃতি। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন, নবীপ্রেমী মানস গঠন এবং চিন্তায় কর্মে খাঁটি ঈমানদার হয়ে উঠার প্রেরণা জোগানোই ইসলামী সংস্কৃতির আসল লক্ষ্য। গাউসে জমান আল্লামা সৈয়দ তৈয়ব শাহ্ (রহ.) জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) এর মতো ভুবন মাতানো সেরা ইসলামী সংস্কৃতি উপহার দিয়ে পুরো মুসলিম মিল্লাতকে ঋণী করেছেন। মুসলমানদের জাগরণে, ঈমানী চেতনা–উচ্ছ্বাসে সিক্ত ও শুদ্ধ হবার বড় উপলক্ষ জশনে জুলুস। আল্লামা সৈয়দ তৈয়ব শাহ্ (রহ.) এর যোগ্য উত্তরাধিকার মুরশেদে বরহক আল্লামা সৈয়দ তাহের শাহ (ম. জি. আ) এবং পীরে বাঙাল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ) এর বিশেষ ভূমিকায় এ জশনে জুলুস আজ বাংলাদেশের অঙ্গন ছড়িয়ে দেশে দেশে বিস্তৃত হচ্ছে। বিশ্বজমিনে আজ যে অশান্তি, অরাজকতা, হানাহানির ধ্বংসাত্মক থাবা এবং নবী–ওলী বিদ্বেষীদের যে দৌরাত্ম্য–ঔদ্ধত্য চলছে তার বিপরীতে শান্তির বাতাবরণে ঐক্য–সংহতি গড়ার ডাক দেয় জশনে জুলুস। জশনে জুলুসে মানুষে মানুষে মিলনের উৎসবে মিছিলের ঐকতানে অন্যায়, মিথ্যা জুলুম ও ঈমান–আক্বীদা বিনাশী তৎপরতা পিছু হটবেই ইনশাআল্লাহ। এই আশাবাদ নবী ওলীপ্রেমি সুন্নি জনতার। মুক্তিকামী দেশবাসীর এবং বিশ্ব মানুষের। জশনে জুলুসের চেতনায়ও শিক্ষায় নতুন স্বপ্নে বড় কর্ম সম্পাদনে, ঈমানি দায়িত্ব পালনে, সুন্নিয়তের দ্বীনি পায়গম সমুন্নত করার প্রচেষ্টায় আসুক অনুকূল জোয়ার। জশনে জুলুস হয়ে উঠুক হকপন্থী শান্তি অন্বেষী বিশ্বের সমগ্র মানুষের ঈমান–আক্বীদা ও হুব্বে রাসূলের (দ.) ভিত্তিতে ঐক্যের জাগরণের–আত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠতম অবলম্বন। এবারের জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবীতে (দ.) নবীপ্রেমীদের অযুত কণ্ঠে ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ও আয়োজনে জশনে জুলুস উদ্যাপন করুন’ এই বলিষ্ঠ আওয়াজ ধ্বনিত হোক। রাষ্ট্রীয় কর্ণধারদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করুক কোটি নবীপ্রেমীর আর্তি–আর্জি। প্রিয় নবীর (দ.) প্রতি ভালবাসা, আনুগত্য ও তাঁরই আদর্শে প্রতিষ্ঠিত থাকার অবিনাশী প্রেরণা হোক জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জশনে জুলুস হয়ে উঠুক সুন্নি জনতার ঐক্য ও উজ্জীবনের মাইলফলক। আমরা আশাকরি, লাখো লাখো নবীপ্রেমী জনতার এ জশনে জুলুস অচিরেই ‘ওয়ার্ল্ড গিনেস বুকে’ স্থান পাবে। কিংবা ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ বা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এই বর্ণাঢ্য জশনে জুলুস।
প্রবৃত্তি তাড়িত অপসংস্কৃতির নিত্য হাতছানিতে মুসলমানদের আদর্শিক ও মূল্যবোধাশ্রয়ী ইসলামী সংস্কৃতি আজ হুমকিগ্রস্ত। কোনো জাতিকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করতে হলে আগে তার নিজস্ব সংস্কৃতি ঐতিহ্য মুছে দিতে হবে– সাম্র্যাজ্যবাদী অপশক্তির এই এজেন্ডা বাস্তবায়িত হচ্ছে আজ মুসলিম দেশগুলোতে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে প্রযুক্তি নির্ভর অপসংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন যুব সমাজ। মুসলমানদের বড় একটি অংশের মাঝে বিরাজিত অপসংস্কৃতির অপছায়া দূরীভূত করতে হলে নিজস্ব বোধ–বিশ্বাসের ইসলামী সংস্কৃতি সামনে নিয়ে আসতে হবে। গাউসে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ্ (র.) সূচিত আজিমুশ্বান ‘জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)’ সংস্কৃতি আজ বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে মুসলিম বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামী তাহজিব তমদ্দুনের সেরা উদাহরণ এ ‘জশনে জুলুস’ দেশে দেশে আরও ছড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে এই ইসলামী সংস্কৃতির মাধ্যমে জাগিয়ে তুলতে হবে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সমপ্রীতিবোধ গড়তে ‘জশনে জুলুস’ বড় উপলক্ষ হয়ে উঠুক আজ ঈদে মিলাদুন্নবীর (দ.) দিনে আমাদের এই কামনা। আসুন! আজ ঈদে মিলাদুন্নবীর (দ) এই মহিমান্বিত দিনে শপথ গ্রহণ করি বিশ্বের নির্যাতিত–নিপীড়িত–নিগৃহীত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। বিশ্বের মজলুম মানুষকে বাঁচাতে আসুন দৃপ্ত শপথ নিই। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াই– এই হোক এবার ঈদে মিলাদুন্নবীর (দ.) আহ্বান।
লেখক: সাংবাদিক