প্রশাসন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় অতি শিগগির সংস্কার কাজ শেষ করে, অন্তর্বর্তী সরকার যেন নিরপেক্ষ নির্বাচনে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য সরকারকে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সংস্কার কাজে তারা হাত দিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই কাজগুলো দরকার। এই কাজগুলো অতিদ্রুত শেষ করে একটা নির্বাচনের দিকে যাওয়া দরকার। যে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে এবং জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। ধৈর্য্য এবং সহনশীলতার সঙ্গে তাদের সহযোগিতা করতে হবে।’ গতকাল রোববার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন মির্জা ফখরুল। খবর বিডিনিউজের।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসানের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার এক মাস সময়ের বেশি সময় পার করেছে। এই এক মাসে শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া প্রশাসনে রদবদল, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল ও গত সরকারের আমলে বঞ্চিতদের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত এসেছে একের পর এক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, আইন–আদালত, সশস্ত্র বাহিনী, হাসপাতাল ও সেবাখাত, জনপ্রশাসন সব জায়গায় পরিবর্তনগুলো হয়েছে এবং হচ্ছে।
সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সংস্কারগুলো, অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এগুলোর সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। আর অন্যান্য সংস্কার যেগুলো আছে, সেটা যে সরকার জনগণের ভোটে আসবে, তারা করবেন। এ সময় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো রাষ্ট্র মেরামতে প্রণীত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব। প্রশাসনে রদবদল চলমান থাকলেও মির্জা ফখরুল মনে করেন প্রশাসন এখন পর্যন্ত ‘ফ্যাসিবাদ’ মুক্ত হয়নি।
দেশে হঠাৎ করে শিল্প শ্রমিকদের মধ্যে যে অসন্তোষের প্রকাশ ঘটেছে তার পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন বলেও জানিয়েছেন বিএনপির ওই নেতা। তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্টগুলোতে যে অশান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, এই পর্যন্ত সুস্পষ্ট যে, এতে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরই ইঙ্গিত আছে। এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যে, একটা চক্রান্ত চলছে।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফখরুল বলেন, স্যোশাল মিডিয়ায়, তারপর আপনাদের কাছে থেকে শুনে–টুনে যা বুঝি যে, সীমান্তের ওপার থেকে কথিত ফ্যাসিবাদী হাসিনার অডিও–টডিও ফাঁস করে দেওয়া হয়, যেগুলোতে বিভ্রান্তিকর খবর থাকে।
সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সমপ্রদায়ের মানুষের ওপরে ঘটে যাওয়া হামলার ঘটনাকে ‘টোটালি বাকোয়াজ’ বর্ণনা করে ফখরুল বলেন, প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে যারা ধর্মীয়সংখ্যালঘু তাদের ওপরে অত্যাচার–নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যেটা একেবারে ঠিক নয়।
‘৮৭৫ জনের মধ্যে বিএনপিরই কমপক্ষে ৪২২’ : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির কমপক্ষে ৪২২ জন মারা গেছে বলে দাবি করেছেন ফখরুল। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী জুলাই গণহত্যায় ১৩ অগাস্ট পর্যন্ত পুরো বাংলাদেশে ৮৭৫ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। দেশজুড়ে শহীদ হওয়া সকল শ্রেণি–পেশা–রাজনীতির মানুষগুলোর এই বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতাকর্মী, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।
‘বিএনপি সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা নয়’ : বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ‘মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ’ উল্লেখ করে স্যোশাল মিডিয়ায় চলমান কথাটি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার। এটা কিন্তু যারা দুষ্টু, যারা সবসময় ফয়দা লুটতে চায়, তারা বলে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ তুলনা হতেই পারে না। কারণ আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়, গণবিরোধী একটা দল। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গণতান্ত্রিক মানুষকে হত্যাকারী একটি দল। আর বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রকে জীবন্ত করার দল। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথযাত্রায় বিএনপির ভূমিকা, অবদান এবং প্রত্যাশার শীর্ষক শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।