খাগড়াছড়িতে গাছের বাকল তুলে হত্যা করা হচ্ছে রেইন ট্রি। খাগড়াছড়ি–পানছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ অন্তত ৮টি বৃক্ষের বাকল তুলে নিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। বাকল তুলে নেয়া বৃক্ষগুলোর বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত। বাকল তুলে ফেলায় ধীরে ধীরে বৃক্ষগুলো মারা যেতে শুরু করে। খাগড়াছড়ির জেলা সদরের ছোটনালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের মালিকানাধীন এসব বৃক্ষ হত্যার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বলে জানায় সওজের খাগড়াছড়ির উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল বারী। স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি চক্র সড়কের দুই পাশের বৃক্ষগুলো পর্যায়ক্রমে বাকল তুলে হত্যা করছে। ইতোমধ্যে কয়েক বছর ধরে সড়কের পাশে থাকা বৃক্ষগুলোকে এভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে। বৃক্ষগুলো মারা যাওয়ার পর তা কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে এমন ঘটনা ঘটলেও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সওজ। খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মখর্তা ফরিদ মিঞা বলেন, গাছের বাকল তুলে নেয়াকে গাডলিং বলে। একটা বৃক্ষ বা গাছ শেকড় থেকে ক্যাম্বিয়াম লেয়ারের মাধ্যমে মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। গাছের বাকল তুলে ফেললে ক্যাম্বিয়াম লেয়ার কাজ করতে পারে না। এতে একটা বৃক্ষ ধীরে ধীরে পাতাশূন্য হয়ে এক পর্যায়ে গাছের ডালপালা শুকিয়ে যেতে শুরু করে এবং গাছটি মারা যায়। সড়ক বিভাগের গাছগুলোর বাকল তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্ত সড়ক বিভাগ এই বিষয়ে বন বিভাগের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। তারা আমাদের (বন বিভাগ) সাথে যোগাযোগ করলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। পিটাছড়া বন ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, খাগড়াছড়ি জেলায় বছরের পর বছর রাস্তার পাশের বর্ষীয়ান গাছগুলোকে বিভিন্ন কৌশলে মেরে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সড়ক বিভাগের নাকের ডগায় এই অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই সড়ক বিভাগের কেউ এর সাথে জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আর যারা এইভাবে মেরে কেটে নিয়ে যায় তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে এই ধরনের সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের উপায় বের করতে হবে।
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বলেন, এর আগেও সড়ক বিভাগের একাধিক বৃক্ষ এই বাকল তুলে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা সে সময়ে সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আমাদের জানা নেই। আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। যেহেতু আমরা থানায় অভিযোগ করেছি, বাকি দায়িত্ব থানার। নতুন করে ছোটনালা এলাকায় ৮টি বৃক্ষের বাকল তুলে নিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। আমি এসডিকে (উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী) আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের পার্বত্য অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। এই ঘটনায় কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেব।