পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে আবার কাটা হবে পাহাড়

বায়েজিদ বোস্তামী-ফৌজদারহাট লিংক রোড ।। থাকবে রিটেইনিং ওয়াল ও জিও ব্যাগ, ব্যয় হবে ৮ কোটি টাকা ।। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় সিডিএ

হাসান আকবর | রবিবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লিংক রোড বানানোর সময় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৬টি পাহাড় কেটেছিল। ৯০ ডিগ্রি খাড়া করে কাটা পাহাড়গুলো বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে রেখেছে। এখন পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে আবার কয়েকটি পাহাড় কাটা, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং জিও ব্যাগ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। সিডিএর পক্ষ থেকে ডিজাইন এবং ড্রয়িং করে তা চুয়েট থেকে অনুমোদনও করিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেলে সিডিএ প্রায় ৮ কোটি টাকা খরচ করে পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করবে। এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে সিডিএ।

জানা যায়, নগরীর যান চলাচলে গতি আনা, অনুন্নত এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগানো, আবাসন এবং শিল্পায়নসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আশায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামীর শেরশাহ বাংলাবাজার থেকে ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার ফৌজদারহাটবায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণ করা হয়। কয়েক দফা প্রকল্প সংশোধনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক হিসেবে গণ্য হলেও পাহাড় কাটা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সিডিএ। রাস্তাটি নির্মাণের সময় কোনো বাছবিচার না করে ১৬টি পাহাড় কাটা হয়। একেবারে খাড়া করে কাটা পাহাড়গুলোর সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে একাধিকবার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। অথচ পাহাড়গুলোকে এভাবে না কেটে রাস্তাটি নির্মাণ করা সম্ভব ছিল বলে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পরিবেশবাদীরা মন্তব্য করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর নির্বিচারে পাহাড় কাটার জন্য সিডিএকে ১০ কোটি টাকা এবং সিডিএর এক ঠিকাদারকে ৫ কোটি টাকা জরিমানাও করে।

অভিযোগ রয়েছে, সিডিএ যে পরিমাণ পাহাড় কাটবে বলে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়েছিল বাস্তবে তার চেয়ে বেশি পাহাড় কেটেছে। তবে পাহাড় বেশি বা কম কাটার চেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে পাহাড় কাটার স্টাইল। ৯০ ডিগ্রি খাড়া করে পাহাড় কাটার ফলে সড়কটির একটি বড় অংশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পরিবেশবাদীদের সমালোচনার মুখে সিডিএ নতুন করে পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নেয় বছর দুয়েক আগে। ১৬টি পাহাড়ের মধ্যে পাঁচটি পাহাড়কে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ করতে হবে বলে জানিয়ে সিডিএর সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী বলেছেন, ওই পাঁচটি পাহাড়ের আরো কিছু অংশ কেটে স্লোভ আনতে হবে। এরপর রিটেইনিং ওয়াল এবং জিও ব্যাগ স্থাপন করে গাছ লাগানোসহ কিছু পদক্ষেপ নিলে পাহাড়গুলো আর ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে না।

অপর একটি সূত্র বলেছে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরে থেকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী পাহাড় রক্ষায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (হিল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান) প্রস্তুতের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করে সিডিএ। ওই কমিটির প্রধান করা হয়েছিল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে। সদস্য হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুজন অধ্যাপক। আছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিডিএর প্রতিনিধি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর ঝুঁকি নিরসনের বিষয়ে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করেছে। সেখানে কী কী করণীয় তাও বলা হয়েছে। তা যাচাই করে অনুমোদন দেওয়ার জন্য চুয়েটের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকদের কাছে পাঠানো হয়। ওই অনুমোদন পাওয়ার পর পাহাড় কাটাসহ পুরো বিষয়টির ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, সড়কটি নির্মাণে ১৬টি পাহাড় কাটা হলেও সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। সর্বোচ্চ পাঁচটি পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ঝুঁকি কীভাবে নিরসন করা যায় তার জন্য গঠিত পরামর্শক কমিটি ইতোমধ্যে ডিজাইন এবং ড্রয়িং অনুমোদন করেছে। এখন পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে। আগামী মাস নাগাদ অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে ৮ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্র আন্দোলনে শহীদ তিন পরিবারের পাশে নতুন জেলা প্রশাসক
পরবর্তী নিবন্ধবিয়ে অনুষ্ঠানে যুবদল নেতাকে হত্যা চেষ্টা