আন্দোলন, সরকার পতন এবং নতুন সরকার গঠনের পর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ–ভারতের যৌথ চলচ্চিত্রের কাজ এগিয়ে ‘নেওয়া যাচ্ছে না’। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের দুইটি সিনেমায় শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিল কলকাতার দুই অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও স্বস্তিকা মুখার্জির। আবার ঢাকা থেকেও তাসনিয়া ফারিণের কলকাতায় গিয়ে একটি কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেসব হয়নি। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য কেবল চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে ভিসা দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ কিংবা অন্য কোনো কাজে ভারতে যেতে পারছেন না কেউ। বিডিনিউজের।
আবার কলকাতায় শিল্পীদেরও বাংলাদেশে আসতে ভিসা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে এবং ঢাকায় এসে শুটিং করার ওয়ার্ক পারমিটের আবেদনে সাড়া পাচ্ছেন না তারা। ফলে স্বস্তিকা মুখার্জিকে নিয়ে ‘আলতাবানু জোছনা দেখেনি‘ সিনেমার শুটিং শুরুই করতে পারেননি এর নির্মাতা। আর ‘তরী’ সিনেমার শুটিংয়ের কাজ শতকরা ৮০ ভাগ শেষ হলেও বাকিটুকু ঝুলে আছে ঋতুপর্ণা ঢাকায় আসতে না পারার জন্য। এছাড়া ভিসা না পাওয়ায় অভিনেত্রী ফারিণের হাত থেকেও ফসকে গেছে কলকাতার সিনেমা ‘প্রতীক্ষা’। তাই এই তিন সিনেমার অভিনয় শিল্পী এবং পরিচালকরা কাজগুলো নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
পরিচালক হিমু আকরামের ‘আলতাবানু জোছনা দেখেনি‘ সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে। এই সিনেমার প্রধান অভিনয়শিল্পী কলকাতার স্বস্তিকার শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিল ৭ বা ৮ সেপ্টেম্বর থেকে। তবে শুটিং শুরু করা সম্ভব হয়নি।
গ্লিটজকে পরিচালক হিমু আকরাম বলেন, “সেপ্টেম্বরের শুরুতেই শুটিংয়ের পরিকল্পনা রেখেছিলাম। আমাদের সব কিছুই প্রস্তুত, কিন্তু স্বস্তিকা মুখার্জি কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে কাজ করবে, ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করে রেখেছি, পাচ্ছি না। ভিসা প্রসেসিংয়েরও একটা জটিলতায় পড়ে গিয়েছি। তাই সিনেমাটি শুরু করা যাচ্ছে না।“শুটিং আরও দুই মাস পেছাতে হচ্ছে। ওয়ার্ক পারমিটের অনুমতি কবে পাওয়া যাবে সেটাও জানি না।
সিনেমার সব কিছুই চূড়ান্ত হয়ে আছে, সময়মতো শুটিং শুরু না হলে তো একটা ক্ষতির সম্মুখীন আমাদের হতে হবে। আমরা এই পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত।” অগাস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে রাশিদ পলাশের পরিচালনায় ‘তরী’ সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নিতে ঢাকায় আসার কথা ছিল পশ্চিবমবঙ্গের তারকা অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের। সিনেমাটির প্রথম অংশের শুটিং শেষ, দ্বিতীয় অংশে ঋতুপর্ণার যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানেও ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সমস্যা বাধ সেধেছে।
এই সিনেমার পরিচালক রাশিদ পলাশ বলেন, “আমরা ‘তরী’ সিনেমার শুটিং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শুরু করতে চেয়েছিলাম। ঋতুপর্ণা দিদির অংশটুকুই বাকি। এখন যে পরিস্থিতি আছে তাতে সেপ্টেম্বরে শুটিং অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। অক্টোবর বা নভেম্বরে মধ্যে করার চেষ্টা করব। কারণ যত দ্রুত সম্ভব শুটিং শেষ করার, কারণ আমাদের সিনেমার ৮০ শতাংশ শুটিং শেষ। আমার দিদির সঙ্গে কথা হয়েছে, সবকিছুই ঠিক আছে পরিস্থিতিটা আরেকটু স্বাভাবিক হলে শুটিংয়ে ফিরব। তবে যে সময়টার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম, সেপ্টেম্বরে ওই আবহাওয়া বা ওই পরিবেশ কতটুকু ধরে রাখতে পারব তা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে, তবে চেষ্টায় থাকব দ্রুত শুটিং শেষ করার।” এ পরিচালক মনে করেন শিল্পীর কাজের ক্ষেত্রে কোনো বিভাজন হয় না, দেশ ভেদেও কাজ হয় না। “আর দুই বাংলার কাজের ক্ষেত্রে কোনো সংকট তৈরি হোক আমরা তা চাই না। আমার মনে হয় খুব দ্রুতই সংকট কেটে যাবে এবং আশা রাখছি কাজটিও ভালো করেই শেষ করতে পারব,” বলেন রাশিদ পলাশ। কলকাতার বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমায় পশ্চিমবঙ্গের নায়ক দীপক অধিকারী দেবের বিপরীতে কাজ করার কথা ছিল ঢাকার ছোট পর্দার অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের। কিন্তু ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় কাজটি ছেড়ে দিতে হচ্ছে তাকে।
ফারিণ বলেন, “নানা অনিশ্চয়তায় সিনেমাটি থেকে সরে আসতে হয়েছে। নভেম্বর মাসে শুটিং শুরুর কথা ছিল, শুরু করা না গেলে দেব ও মিঠুন চক্রবর্তীর শিডিউল পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ থেকে এখন ভিসা পাওয়াটাও অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। তাই সিনেমাটিতে আমার কাজ করা হচ্ছে না।