পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি–বেসরকারি পাহাড়, পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের অবিলম্বে উচ্ছেদ করা হবে।’ বলা হয়েছে, ওইসব অবৈধ বসবাসকারীদের পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। ১১ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে আমরা জানতে পারি, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা মতে সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করতে যারা সহযোগিতা ও উৎসাহিত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা করা হবে। খাস ও ব্যক্তিগত পাহাড়ের কোন ধরনের ক্ষতি করা যাবে না। অবৈধ বসতি উচ্ছেদসহ স্থায়ীভাবে সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে। এ জন্য জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মধ্যে আন্তঃদপ্তর আলোচনা করে উচ্ছেদ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের নির্দেশনা দেন তিনি। পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদসহ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিছিন্নকরণ কার্যক্রমের অগ্রগতি কতটুকু তা পনের দিন পর পর প্রতিবেদন আকারে জানাতে হবে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দেশনা দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সরকারি, ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সংস্থার পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মালিকানাধীন পাহাড় থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার পর যাতে বেদখল না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
কিন্তু আসল কথা হলো, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় যে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে, সেটি নতুন নয়। এর আগেও অনেকবার এরকম সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাস্তবায়ন হয়নি।
নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। জানা যায়, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা মানুষগুলো তাদের ঘরের মালিক নয়। স্বল্প ভাড়ায় তারা সেখানে বসবাসের সুযোগ পায়। পাহাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা প্রতিটি বস্তি কোনো না কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যারা নিয়মিত ভাড়া আদায় করে। এই চক্রটির কারণে প্রশাসন চেষ্টা করেও পাহাড়ে বসতি বন্ধ করতে পারছে না। আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অপরিকল্পিত নগরীতে কোনো পরিকল্পনা নেই। যদি পরিকল্পনা থাকতো তাহলে তাদের কোথাও স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া যেত। পাহাড়ধস বন্ধে বেশ কিছু পাহাড় সংরক্ষণ করে দেখা যেতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, পাহাড়গুলো আমাদের সম্পদ, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা যায় না! ধারাবাহিকভাবে পাহাড়ের ক্ষতি করে চললে পাহাড়ও একসময় তার প্রতিশোধ নেবে। পাহাড়কে নিজেদের স্বার্থে কোনো গোষ্ঠী বা চক্র যেন ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচলিত যেসব আইন আছে সেসব আইনে যে শাস্তির বিধান বর্ণিত আছে তা আরও বৃদ্ধি করে এর সুপ্রয়োগ জোরদার করতে হবে। পাহাড় দখলকারীদের উচ্ছেদ করতে হলে যতটুকু জনবল বন বিভাগের থাকা উচিত সেসব বৃদ্ধিতেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। জলবায়ুু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের হাত থেকে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড় ও গাছ কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্ষায় কোনো না কোনো সময় ভারি বর্ষণ হবেই। তবে তার সঙ্গে পাহাড় কাটা, বনের গাছপালা কেটে ফেলার ঘটনা যোগ হলেই এর খেসারত চরমভাবে দিতে হবে আমাদের। পাহাড়ে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে কিছুটা হলেও পাহাড় কাটা রোধ করা যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। পাহাড় ধ্বংসের কুফল সবাইকে বোঝাতে হবে। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা রোধে এবং পাহাড়ে বসবাসকারীদের সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড় ধসের অন্যতম একটা কারণ মানবসৃষ্ট। তাঁরা বলেন, অবৈধভাবে প্রচুর পরিমাণ পাহাড় কাটার ফলে পাহাড় ধস হচ্ছে এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী অনেকে মারা যাচ্ছেন। বারবার অভিযানের পরও ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাসের আগ্রহ দূর করতে হবে। মৃত্যুর মর্মান্তিক চিত্রকে তাদের সামনে উপস্থাপনার মাধ্যমে পাহাড়ে বসবাসে নিরুৎসাহিত করা জরুরি। যারা পাহাড় কাটায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।