চার বছরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি

লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপি তিন গ্রুপে বিভক্ত, তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | শনিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ চার বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। এ জন্য দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করছেন তৃণমূলের কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা আছে তাদের মধ্যে। বর্তমানে উপজেলা বিএনপি তিন গ্রুপে বিভক্ত। এর একটির নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন। এছড়া সদস্য সচিব মো. সাজ্জাদুর রহমান এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ছলিম উদ্দিন খোকন চৌধুরী অপর দুই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর থেকে তিন গ্রুপই পৃথকভাবে সভাসমাবেশ করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, আহ্বায়ক কমিটিতে ‘পরীক্ষিত ও ত্যাগী’ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। যার জের ধরেই শুরু হয় এ গ্রুপিং।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর নাজমুল মোস্তফা আমিনকে আহ্বায়ক ও মো. সাজ্জাদুর রহমানকে সদস্য সচিব করে লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির দুই সদস্য বিশিষ্ট আংশিক আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর উক্ত কমিটি নবায়ন করে ৫১ সদস্যে উন্নীত করে অনুমোদন দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর কিছুদিন সকলে একসাথে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করেন। পরে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়। এতে শুরু হয় গ্রুপিং। পরে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন সম্মেলন করে প্রতিটি ইউনিয়নে কমিটি দেন। এরপর পাল্টা ইউনিয়ন কমিটি দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সাজ্জাদুর রহমান ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. আবু তাহের।

লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বেলাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। সিনিয়র নেতারা একে অপরকে ঈর্ষা করে আলাদা আলাদা বলয় তৈরি করছেন বলেই এই গ্রুপিং। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যদি তথাকথিত ভাইয়ের রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের রাজনীতি করেন তাহলে আর গ্রুপিং থাকবে না। পাশাপাশি যারা গ্রুপিং রাজনীতি করবে তাদেরকেও তৃণমূল নেতাদের বয়কট করা উচিৎ। আমরা আশা রাখছি দক্ষিণ জেলায় নতুন কমিটি ঘোষণা হলেই তাদের নির্দেশনায় সব উপজেলায় বিএনপি গ্রুপিং বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হবে।

লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সালাউদ্দিন চৌধুরী সোহেল বলেন, দলের সাবেক ত্যাগী ছাত্র নেতাদের আহ্বায়ক কমিটিতে মূল্যায়ন না করায় গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। জেলার সিনিয়র নেতারা চাইলে বিষয়টি সমাধান করতে পারবেন।

লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল হাশেম জানান, দলের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি আমরা। এর মধ্যে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাঝে মধ্যে আমাদের সাথে থাকেন। আবার পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেন। সেটাকে আমরা গ্রুপিং বলে মনে করছি না।

লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম ছলিম উদ্দিন খোকন চৌধুরী বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় প্রত্যেকের মতামত নেয়া হয়নি। এছাড়া নব্বইয়ের দশকের ছাত্র নেতা ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করার কারণে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। জেলার নেতারা এগিয়ে আসলে গ্রুপিং দ্বন্দ্ব সমাধান হবে। ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ কিছু সাংগঠনিক সমস্যা আছে, যার কারণে সমাধান না হওয়ায় দলে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। তবে দলের কারো সাথে ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে আমি ও আমার নেতাকর্মীরা গায়েবি মামলায় জেল খেটেছি। বিভক্ত বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে দলের সিনিয়র নেতারা যেই নির্দেশনা দিবেন তা মেনে নিব। ইউনিয়ন কমিটি করতে সমন্বয় না হওয়ায় উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি।

লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন বলেন, লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপিতে কোনো গ্রুপিং নেই। সাবেক কিছু বিএনপি নেতার ইন্ধনে উপজেলা জাতীয়তাবাদী দলের ক্ষতি করার জন্য গ্রুপিং গ্রুপিং নামে নাটক করতে সবসময় সচেষ্ট রয়েছেন। যাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়ে গ্রুপিং করা দায়িত্বজ্ঞানহীন অপরাজনীতি। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সম্মেলন করে যথানিয়মে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তালিকা দক্ষিণ জেলা কমিটির কাছে জমা দেয়া হয়েছে। উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দায়িত্ব দক্ষিণ জেলা কমিটির। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়ন উপেক্ষা করে বিএনপির প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি। দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। গায়েবি মামলার আসামি হয়েছি। পুলিশের হামলার শিকার হয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণঅভ্যুত্থানে ‘শহীদের’ তালিকা যাচাইয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধপানি ঢুকে নষ্ট ১০৬ কোটি টাকার পণ্য