চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলা কর্ণফুলীতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) রাক্ষুসে ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের পাহাড়; কিন্তু পিডিবি উদাসীন। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে ডিজিটাল নামে যে প্রিপেইড মিটার চালু করেছে পিডিবি তা গ্রাহকের মন জয় করতে পারেনি।
যদিও এই মিটারে গ্রাহক অগ্রীম রিচার্জ করে বিদ্যুৎ সেবা গ্রহণ করেন। তবে নতুন এই ব্যবস্থা নিয়ে গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়মের অভিযোগ করে আসছেন। টোটাল চার্জ, ডিমান্ড চার্জ ও অতিরিক্ত ইউনিট প্রতি টাকা কর্তন করাসহ নানা অভিযোগ ডিজিটাল প্রিপেইড মিটারের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি, এই মিটারে অস্বাভাবিক হারে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ স্বয়ং ঘরে ঘরে গ্রাহকদের। কর্ণফুলী উপজেলায় সাড়ে ৩১ হাজার পিডিবি গ্রাহকের নব্বই ভাগ গ্রাহকের অভিযোগ এই মিটার টাকা বেশি কাটে। আগে যে বাড়িতে ৭০০ টাকার বিদ্যুৎ বিল আসতো, এখন সে বাড়িতে ২ হাজার ৫০০ টাকা রিচার্জ করতে হয়। তাও মাস যায় না।
এমনই একটি অভিযোগ করেন জাহিদ হোসেন নামে চরলক্ষ্যার এক গ্রাহক। তিনি লেন, ‘এইভাবে গরিবের গলা কাটা কতটা যৌক্তিক? মাসের ১৭ দিন না যেতেই ব্যালেন্স শেষ! মিটারের সব টাকা সাবাড় করে দিয়েছে রাক্ষুসে প্রিপেইড মিটার। গ্রাহক এত টাকা কোথায় পাবে। গ্রাহক কী আলাদিনের দৈত্য, না পিডিবির মিটারে জিন আছে।’
কর্ণফুলীর মাহিম ও মো. জালাল উদ্দিন নামে আরও দুই গ্রাহক বলেন, ‘আমাদের বাসায়ও সেইম অবস্থা। পরে বিদ্যুতের এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম মাসের শেষ দিকে নাকি বিদ্যুতের বিল একটু বেশি কাটে। প্রথম দিকে কম কাটে। আদৌও সত্য কিনা জানি না। এই মিটার বাদ দিয়ে আগের মিটার স্থাপন করা জরুরি।’
কলেজ বাজার এলাকার মুহাম্মদ রিপন, ওসমান হোসাইন ও চরলক্ষ্যার রুবেল আর চরপাথরঘাটার খোরশেদ আলম নামে তিন গ্রাহকেরও একই অভিযোগে কড়া মন্তব্য-‘ডিজিটাল মিটার স্মার্ট চোর। কার কাছে বিচার দিব। বিচার কে করবে? একটা মিটার কিনতে হয় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায়। এটা অফিস থেকে সিস্টেমে অনুমোদন করে আনতে লাগে আরো ৮-১০ হাজার। এরপর প্রতি মাসে বিল ঢুকানোর সময় বলে ‘মিটার রেন্ট’ ডিমান্ড চার্জ। আমার মিটার, আমাকেই আবার ভাড়া দিতে হয়। এটি আজব দেশ! দীর্ঘ ৭০-৮০ বছর মিটার ভাড়া কেন দেবো। মিটারটি আমাদের টাকায় কেনা। এসবের একটা ব্যবস্থা যেন বর্তমান সরকার করে সে প্রত্যাশা আমাদের।’
খোয়াজনগরের চাকরিজীবী মো. ইসমাইল নামের আরেক ক্ষুব্ধ গ্রাহক বলেন, ‘ডিজিটাল মিটার নাম দিয়ে সাধারণ মানুষকে লুটে খাচ্ছে। এমন অরাজকতা দেশে চলতে দেওয়া যাবে না। সবাইকে প্রতিবাদ করতে হবে।’
অন্যদিকে, বর্তমানে কর্ণফুলী পিডিবি বিদ্যুৎ বিল আদায়ে অতিরিক্ত কঠোরতা অবলম্বন করছে। তাঁদের প্রতি মাসে বকেয়া আদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন টার্গেট দেওয়া হচ্ছে। সবদিকে হযবরল অবস্থা। বিভিন্ন সূত্র জানায়, প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে মাস শেষে অনলাইনে ইচ্ছেমতো গোপনে গ্রাহকের টাকা কাটা হলে বিদ্যুৎ বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সহজ হয় হয়তো। তাই ডিজিটাল মিটার লাগিয়েছে পিডিবি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে পিডিবির কর্ণফুলী মইজ্জ্যারটেক উপ-কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রণয় আচার্য্য এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। তবে স্থানীয় বেশির ভাগ পিডিবি গ্রাহকদের অভিযোগ প্রকৌশলী প্রণয় আচার্য্য ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তাঁরা গ্রাহকদের নানা ভাবে হয়রানি করছেন। যা স্বয়ং পিডিবির কর্মচারীরা জানিয়েছেন।
ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রসঙ্গে পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আ. স. ম. রেজাউন নবী বলেন, ‘মিটারের ইউনিট প্রতি বিল কর্তনের বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট করা। সরকার যদি এটি পরিবর্তন করে। তবে পাল্টানো সম্ভব। কারণ এটি আমি বা পিডিবি এপ্লাই করে না। প্রতি মাসে ডিমান্ড চার্জ ৪২ টাকা সরকার নির্ধারণ করেছেন। এটি মূলত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন থেকে নির্ধারিত।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল বিউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) উজ্জ্বল কুমার মোহন্ত বলেন, ‘ডিজিটাল প্রি পেইড মিটারে বিল বেশি কাটার কথা না। আমরাও ব্যবহার করি। তবে আগের এনালগ মিটারেও ডিমান্ড চার্জ কাটা হতো। কিন্তু তখন পোস্ট পেইড মিটার ছিলো। দুই কিলোওয়াট লোড সেনসেশন ছিলো। তখন একটু কম ছিলো ডিমান্ড চার্জ। তাই চার্জটা চোখে পড়তো না কারো। এখন সবার চোখে পড়তেছে হয়তো। এখন দুই কিলোওয়াটের উপরে গেলে কিক (ডিঙিয়ে) হচ্ছে। বিল বাড়তেছে।’