বন্ধুরা, আমরা অনেকেই কাপ্তাই হ্রদের নাম শুনেছি। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ যা ১৯৫৬ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে অবস্থিত এই হ্রদটি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত যা মনোরম পাহাড়ি ঝর্ণা এবং ঘন সবুজের সৌন্দর্য্যে ঘেরা।
আজ আমরা জানবো পৃথিবীর আরো কিছু বিস্ময়কর হ্রদের গল্প যেগুলো আমাদের কল্পনাশক্তিকে ছাড়িয়ে যাবে কিন্তু প্রশ্ন হলো হ্রদ আসলে কী? হ্রদ বলতে বোঝায় স্থলভাগের মধ্যে অবস্থিত বিশাল আকারের জলাধার যা আয়তনে অনেক বড় এবং গভীর হয়। হ্রদ সাগরের মতো নয় কারণ এটি সমুদ্র থেকে আলাদা থাকে। তাহলে এসো, আজকের লেখার মাধ্যমে ভ্রমণ করে আসা যাক পৃথিবীর কিছু বিখ্যাত হ্রদ থেকে। পৃথিবীর অধিকাংশ হ্রদ মিঠা পানির এবং এর বেশিরভাগই উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। বিশ্বজুড়ে যে সংখ্যক হ্রদ রয়েছে সেগুলোর শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি রয়েছে কানাডায়। ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডকে বলা হয় ‘হাজারো হ্রদের দেশ’ কারণ সেখানে ছোট–বড় প্রায় ১,৮৭,৮৮৮টি হ্রদ রয়েছে যেগুলোর মধ্যে ৬০,০০০টি বিশাল আকারের।
কিছু হ্রদ মানুষের তৈরি, যেমন কাপ্তাই হ্রদ। এগুলো জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, বিনোদন, সেচ বা শিল্পে ব্যবহার করার জন্য নির্মিত হয়েছে। যদি কোনো হ্রদ থেকে নদী বের না হয় বা সেগুলি ছোট হয় তবে হ্রদের পানি শুধু বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বা মাটির ছিদ্রের মাধ্যমে কমতে থাকে। এমন কিছু হ্রদও আছে যেগুলোতে পানি দ্রুত বাষ্প হয়ে যায় এবং আশেপাশের মাটির লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। তখন হ্রদের পানি খুব লবণাক্ত হয়ে যায়। আর এই ধরনের হ্রদকে বলা হয় লবণাক্ত হ্রদ। যেমন, গ্রেট সল্ট লেক, ক্যাসপিয়ান সাগর, আরাল সাগর, ডেড সি ইত্যাদি।
পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে কিছু বিখ্যাত হ্রদ রয়েছে। আফ্রিকায় রয়েছে ভিক্টোরিয়া হ্রদ যা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির হ্রদ। এশিয়ায় রয়েছে বৈকাল হ্রদ যা এশিয়ার বৃহত্তম হ্রদ। ইউরোপে রয়েছে লাডোগা হ্রদ যা উত্তর–পশ্চিম রাশিয়ায় অবস্থিত। উত্তর আমেরিকায় রয়েছে সুপেরিয়র হ্রদ যা বিশ্বের বৃহত্তম মিঠা পানির হ্রদ। দক্ষিণ আমেরিকাতে রয়েছে টিটিকাকা হ্রদ যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত হ্রদ। টিটিকাকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৮২১ মিটার। এই হ্রদে নৌকাও চলতে পারে যা খুবই বিরল। আর অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে আইর হ্রদ যা অধিকাংশ সময়ে শুকনো থাকে তবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে পূর্ণ হয়।
বিশ্বের বৃহত্তম হ্রদ হলো ক্যাসপিয়ান সাগর যার আয়তন ৩,৯৪,২৯৯ বর্গকিলোমিটার। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিঠা পানির হ্রদ হলো সুপেরিয়র হ্রদ। আবার সবচেয়ে দীর্ঘ মিঠা পানির হ্রদ হলো টাঙ্গানিয়াকা হ্রদ যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৬০ কিলোমিটার। আর সবচেয়ে গভীর হ্রদ হলো বৈকাল হ্রদ যার গভীরতা ১,৬৩৭ মিটার। আবার পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু হ্রদ হলো ডেড সি যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪১৮ মিটার নিচে অবস্থিত। বন্ধুরা, দেখেছো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের হ্রদগুলো কতটা না বৈচিত্র্যময় এবং অদ্ভুত! আমরা যদি চেষ্টা করি তাহলে এমন অনেক কিছুই জানতে পারবো যা আমাদের আশ্চর্য করবে। মনে রেখো, শেখা এবং জানার মধ্যেই রয়েছে পৃথিবীর সেরা আনন্দ!