শেখ হাসিনা সরকারের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস পূর্তিতে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নিজেদের প্রত্যাশা আর মতামত তুলে ধরেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা। গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কার্যালয় শাপলায় বেলা ১১টা থেকে এ মতবিনিময় সভা দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে, যেখানে অংশ নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৫০ জন শিক্ষার্থী।
সরকারি হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে রোগীদের যাতে হেনস্তা না হতে হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা চাই চিকিৎসা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক। যেখানে শুধু চিকিৎসক না, রোগীদেরও সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। সিভিল সার্ভিস, জুডিশিয়াল সার্ভিসের মতো বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসের অধীনে সব মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের আনা গেলে স্বচ্ছতা ও সেবার মান বৃদ্ধি পাবে বলে মত দেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
দেশ থেকে মেধা পাচার বন্ধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের চেয়েও মেধা পাচার ভয়ংকর। মেধা পাচার না হলে প্রতি বছরই দুই–একজন ড. ইউনূস বের হতো। বিদেশে পিএইচডি করতে যাওয়াদের দেশে ফিরিয়ে এনে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
‘মব জাস্টিস’ নিয়ন্ত্রণ করার অনুরোধ করে এক নারী সমন্বয়ক বলেন, এই মুহূর্তে প্রধান কাজের মধ্যে এটি। মব জাস্টিস যদি সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায় এবং কুচক্রী মহল এ দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে আমাদের ভেতর প্রবেশ করে ঐক্য নষ্ট করার চেষ্টা করবে।
আন্দোলন রাজনীতির অংশ উল্লেখ করে আরেক নারী সমন্বয়ক বলেন, এ রাজনীতিটা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকবে। সকলের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, সেটা শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী হোক, সেটা থাকবে চায়ের চুমুকে। পাঠদানের সময় তিনি শুধুই শিক্ষক। কোনো ট্যাগধারী ছাত্র ও শিক্ষককে ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধের পাশাপাশি কৃষকদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর দাবিও করেন এ নারী সমন্বয়ক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আগামীতে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন চান তিনি।
ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন এক সমন্বয়ক। তিনি বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ব্যাপার বন্ধ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা এখনো সঠিকভাবে চালু হয়নি জানিয়ে তিনি তা দ্রুত চালুর দাবি করেন। এছাড়া শিক্ষায় আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, যে রক্ত ঝরেছে তার ঋণ শোধ করার দায় আমাদের কাঁধে। এ দায়িত্ব পালনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ দায়িত্ব পালন করতে পারলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আমাদের স্মরণ করবে। আমাদের দায়িত্বের গুরুত্ব ও ভারত্ব বুঝতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের তরুণ সমাজ ও ছাত্রদেরকে দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবেন। আমাদের সংগ্রাম চলমান থাকবে।