চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে সৈন্যেরটেক টু বোর্ড বাজার চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে মেরিন একাডেমির ৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে প্রায় ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, কার্যাদেশ নিয়েও কাজ করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বোর্ড বাজার সড়কের বড় বড় ৮ গর্ত সংস্কারে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা শুনেছি। অথচ খানা খন্দ আর বড় বড় গর্তে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। বেহাল দশা সড়কটির। প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সড়ক ব্যবহারকারী শত শত শিক্ষার্থী, হাজার হাজার পথচারী ও যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের।
তথ্যমতে, এ সড়কে রয়েছে সিএমপির কর্ণফুলী থানা, ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, চরলক্ষ্যা উচ্চ বিদ্যালয়সহ নানা এনজিওসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহীতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে। অথচ এলজিইডি অফিসের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
যদিও জনশ্রুতি রয়েছে, বর্তমান চরলক্ষ্যার ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান তালুকদার প্রায় তিন লাখ টাকার ব্যক্তিগত খরচে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) কে ম্যানেজ করে সড়কটির বরাদ্দ এনেছিলেন। যদিও এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিতে রয়ে যায় ধোঁয়াশা।
সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, শুরুতে সড়কটি এক সময় ইটের সলিং থাকলেও পরে কার্পেটিংয়ের পাকা সড়কে সংস্কার করা হয়।
কিন্তু ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত। তবে ৮টি গর্ত বেশ চোখে পড়ার মতো। মটরসাইকেল, ইজিবাইক ও অন্য ছোট বড় যান বাহনগুলো চলছে হেলে দুলে। এলাকাবাসীর দাবি দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে দুর্ভোগ মুক্ত করার।
বোর্ড বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ রুবেল ও কর্ণফুলী থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ‘একটু বর্ষা হলেই তাঁরা এলাকা থেকে বের হতে পারে না। বিশেষ করে বোর্ডবাজার থেকে সৈন্যেরটেক পর্যন্ত রাস্তা এতোটাই খারাপ যে কোনোভাবেই চলাচল করা যাচ্ছে না। মোটর সাইকেলে আরো সমস্যা। যেখানে এখন ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে।’
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড রিকুয়েস্ট ফর প্রপোজল ডকুমেন্ট (আরএফপি) সূত্রে জানা গেছে,
চট্টগ্রাম এলজিইডি অফিসের প্রধান প্রকৌশলী সড়কটির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। সড়কটির আবেদন আইডি ছিলো-১৯৫৭৭১। টেন্ডার আইডি- ৯৭৮৭১৩। যার প্রজেক্ট কোড ছিলো ২২৪২৪৯৭০০। রোড আইডি-৪১৫৬১৩০০৪।
প্রজেক্টটি ছিলো-গ্রামীণ সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্প (আরসিআইপি)। যার আর্থিক সহায়তায় ছিলেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ছিলো উন্মুক্ত সংক্ষেপে ওটিএম। একই প্যাকেজে ছিলো পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলার একাধিক সড়ক। কেননা, পূর্বে কর্ণফুলী ছিলো পটিয়ার অধীন। সড়কটির প্রি টেন্ডার শুরু হয় ১৬ মে, টেন্ডার ক্লোজ হয় ২৪ জুন।
এ প্রকল্পের ইমপ্রুভমেন্ট টু অনুযায়ী সড়কটির উন্নয়ন করা হবে, সৈন্যেরটেক টু চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদ। আবার ইউনিয়ন পরিষদ হতে মেরিন একাডেমি সড়ক। পরে শিকলবাহার নিকট হয়ে চরলক্ষ্যা বোর্ড বাজার। এই ৪ স্পটে ৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজে কার্পেটিং ঢালাই করা হবে। এ সড়কের সলভ্যাঞ্জ মেটেরিয়াল হিসেবে মোট খরচ দেখানো হয়েছে ৪১ লাখ ৩০ হাজার ৫২২ টাকা। ঠিকাদারের জামানতের পরিমাণ ৫৬ লাখ টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজটি পেয়েছেন তৌহিদ এন্ড ব্রাদারস। প্রতিষ্ঠানটির প্রোপাইটর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহমদ কবির চৌধুরী। তিনি নিজেই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী অংশে এ সড়কের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি টাকা।
এতে জেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, এসব সড়কের সুবিধা নিশ্চিতকরণ, টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী ও ভালো মানের সড়ক নির্মাণে রাস্তার ভিত্তি মজবুত করার সুপারিশ করেছেন। পাশাপাশি পরামর্শ দিয়েছেন সাধারণ ও সাইট ফ্যাসিলিটি, আর্থ ওয়ার্কস, পেভমেন্ট এবং সারফেসিং ওয়ার্কস, স্ট্রাকচারাল ওয়ার্কস, প্রোটেক্টিভ ওয়ার্কস, রোড সেফটি ওয়ার্কস, বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এনভায়রনমেন্টাল মিটিগেশন অ্যান্ড এনহ্যান্সমেন্ট ওয়ার্কস এর বিষয়গুলো যথাযথ নিয়ম মেনে কাজ করার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৌহিদ এন্ড ব্রাদারস এর প্রোপাইটর আহমদ কবির চৌধুরী বলেন, ‘মাত্র কিছু দিন আগে ফাইনাল টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে। বিগত সরকার পতনের পরে। বৃষ্টির কারণে এতদিন কাজ ধরা হয়নি। হঠাৎ কাজ শুরু করলে আবার যদি বৃষ্টি পড়। তখন গর্তে মানুষজন হাঁটতে পারবে না। কষ্ট হবে। আমি এলজিইডি অফিসের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। অল্প দিনেই কাজটি শুরু করব বলে আশা করছি।’
চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোলায়মান তালুকদার এর সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘রাস্তাটির অবস্থা দেখে নিজ উদ্যোগে এলাকাবাসীর স্বার্থে প্রকল্পটি ঢাকা অফিস থেকে পাস করিয়েছিলাম। যত দ্রুত সম্ভব সড়কটির উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে নিশ্চয়ই জনদূর্ভোগ কমে যাবে।’
কর্ণফুলী এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহেদুল আলম চৌধুরী’র মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। তবে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘রোববারে বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলীর ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে একই অফিসের সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী সুমন তালুকদার বলেন, ‘ঠিকাদারের সঙ্গে এখনও কাগজপত্রের কিছু কাজ হয়তো বাকি থাকায় কাজটি শুরু করা যায়নি। তবে অল্পদিনের মধ্যে কাজটি শুরু হবে। জনভোগান্তি কমে যাবে।’