সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা কারখানায় স্ক্র্যাপ জাহাজের পাম্প রুমে কাটিং এর কাজ করার সময় ভয়াবহ ট্যাংক বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ১২ জন শ্রমিক। গতকাল শনিবার দুপুরে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর তেঁতুলতলা এলাকার সাগর উপকূলে অবস্থিত শওকত আলী চৌধুরী মালিকানাধীন এস এন কর্পোরেশন নামের জাহাজভাঙা কারখানায় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিনসহ বিস্ফোরক ও পরিবেশের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসেন।
দগ্ধ শ্রমিকরা হলেন– আহাম্মদ উল্লাহ (৪৩), মোহাম্মদ আল আমিন (৪৫), মোহাম্মদ বরকত উল্লা (৩৭), হাবিল আহমেদ (৪৬), মোহাম্মদ নিয়ামুল হক (৩৫), আনোয়ার হোসেন (৩২), আবুল কাশেম (২৮), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (৩৩), মোহাম্মদ খাইরুল (৩২), মোহাম্মদ সাগর (৩৪), মোহাম্মদ রফিক (৩১) ও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৩৬)। তাদের সবাইকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ৮ জনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আইসিইউ সাপোর্ট দিয়ে ঢাকা বারডেমে প্রেরণ করা হয়।
কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে ওই জাহাজভাঙা কারখানার পাম্প রুমের ভেতরে কাটিং এর কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। এমন সময় হঠাৎ সেখানে থাকা একটি ট্যাংকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে আগুন ধরে যাওয়ার পাশাপাশি কেঁপে ওঠে কারখানার আশপাশ। এ সময় পাম্প রুমের ভেতরে কাজ করা ১২ শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
কুমিরা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মামুন বলেন, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সীতাকুণ্ড কুমিরা এলাকার এসএম করপোরেশন ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর তাতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে আগুনের তীব্রতায় প্রথমে ভিতরে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয় ফায়ার ফাইটারদের।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, সীতাকুণ্ডে শিপ ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ১২ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। এদের অনেকে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন। ৮ থেকে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, দুপুরের দিকে বিকট শব্দে কেঁপে উঠে পুরো এলাকা। এসময় স্থানীয় কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি ইয়ার্ড মালিকপক্ষ। বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ দগ্ধ অবস্থায় কিছু শ্রমিককে হাসপাতালে পাঠাতে দেখাতে পাই।
কারখানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. শওকত আজাদ জানান, স্ক্র্যাপ জাহাজটি কাটার কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে ছিল। দুপুরে জাহাজের শেষপ্রান্তে থাকা পাম্প রুমের কাটিং এর কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। এই সময় হঠাৎই ভেতরে থাকা ট্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ১২ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, আহত ১২ শ্রমিকের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য আইসিইউ সাপোর্ট দিয়ে ঢাকা বারডেমে প্রেরণ করা হয়েছে। মালিকদের পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যয় বহনের জন্য জাহাজভাঙা শিল্প এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দকে বলা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন জানান, বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।