চট্টগ্রামে পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারীদের সাত দিনের মধ্যে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম। অন্যথায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সকালে নগরীর আকবর শাহ উত্তর লেকসিটি, হারবাতলী, শাপলা ও লতিফপুর এলাকার অন্তত ১৫টি পাহাড় কাটার পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, পাহাড় কাটা রোধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরি করলে ভারি বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া বিশ্বের জীববৈচিত্র রক্ষায় ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ো–ডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় পানি ও জমির ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ করার জন্য আইন পাস করা হয়েছে। এসব বিবেচনা করে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কোনো ধরনের নদী, পুকুর, ডোবা যেমন ভরাট করা যাবে না তেমনি পাহাড়ের মাটিও কাটা যাবে না। কোনো পাহাড় ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও সে পাহাড়ের মাটি কাটা যাবে না। যারা এতদিন পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরি করেছেন, তাদের আগামী সাত দিনের মধ্যে নিজ দায়িত্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। অন্যথায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের অপসারণ করা হবে।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপর চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় রাতের আঁধারে পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে আকবর শাহ এলাকা অন্যতম। এদিকে পাহাড় ছাড়াও আকবর শাহ থানাধীন কালিরছড়া খাল ভরাট করে নির্মিত স্থাপনাও পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত সচিব।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, অতিরিক্ত সচিবের পরিদর্শনের সময় দুজনকে আটক করে জরিমানা করা হয়। একজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপরজনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাহাড় কাটার সময়েই তাদের আটক করা হয়। আটক দুজনের হাতে তখন কোদাল ও কাস্তে ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, জায়গার মালিকের নির্দেশে সবজি চাষ করার জন্য তারা পাহাড়ের মাটি কাটছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, কালীরছড়া খাল থেকে দখলদারদের উচ্ছেদপূর্বক খালের অংশ দখলমুক্ত করা, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন, যেসব পাহাড় কেটে গত কয়েকদিন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো ম্যাজিস্ট্রেসি অভিযান দিয়ে উচ্ছেদ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব।
পরিদর্শনকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. রেজাউল করিম, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক হাসান হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর পরিচালক সোনিয়া সুলতানা, চট্টগ্রাম জেলার উপ–পরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান, কাট্টলী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত সিদ্দিকী, আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. মামুন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মুনিরা পারভীন রুবা, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ, সহকারী পরিচালক মো. হাসান আহম্মদ ও পরিদর্শক রুম্পা সিদকারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অধিদপ্তরের আরেকটি টিম নগরের খুলশীতে পাহাড় কাটার সময় অভিযান চালিয়ে ১ লাখ টাকা জরিমানার কথা জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তর জানায়, জরিমানার পাশাপাশি মামলাও দায়ের করা হয়।