জীবন ঘোষাল : ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী

| রবিবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

জীবন ঘোষাল(১৯১২১৯৩০)। তাঁর প্রকৃত নাম মাখন লাল। তিনি ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জুন চট্টগ্রামের সদর ঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম যশোদা ঘোষাল। সেই সময়কার চাঞ্চল্যকর ঘটনা হল চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার দখল। মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে সংগঠিত এই বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক বিপ্লবী জীবন ঘোষাল। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল মধ্যরাত্রে চট্টগ্রামের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মধ্যদিয়ে এই বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৮ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চারদিন কার্যত স্বাধীন থাকে চট্টগ্রাম। পুলিশের অস্ত্রাগার দখলের জন্য গঠিত দলে ছিলেন জীবন ঘোষাল। অস্ত্রাগার দখলের পর সেখানে বিপ্লবীদের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয় এবং ভারতীয় পতাকা উত্তোলন ও ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় সামরিক সরকার। চট্টগ্রাম ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয় বীর চট্টলার গুটিকয় দামাল তরুণের অসীম সাহসী উদ্যোগে। জীবন ঘোষাল তাঁদের একজন। জীবন ঘোষাল ছাত্রাবস্থায় অনুশীলন আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সূর্যসেনের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইরিশ বিপ্লবীদের ‘ইস্টার বিদ্রোহের’ স্মৃতি বিজড়িত ‘গুডফ্রাইডের’ দিনে, ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল রাত দশটায়, চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের অত্যন্ত সুপরিকল্পিত অভিযান শুরু করার বিষয়ে বিপ্লবীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার দখলের কর্মসূচি গ্রহণ করেন বিপ্লবীরা। রাতে বিপ্লবীরা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন। বিপ্লবীরা একের পর এক অতর্কিত আক্রমণ করে সরকারি অস্ত্রাগার, টেলিফোন কেন্দ্র, টেলিগ্রাফ ভবনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে নেন। চারদিন পরে ২২শে এপ্রিল বিকেল বেলা বিপ্লবীদের সাথে জালালাবাদের যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ৮০ জন সেনা মারা যান। এদিকে বিপ্লবীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, কিন্তু জীবন ঘোষাল আর বিপ্লবীদের সাথে সাক্ষাতের সময় পাননি। পরে তৎকালীন নোয়াখালী জেলার ফেনী রেল স্টেশনে জীবন ঘোষাল ধরা পড়েন কিন্তু পুলিশ হাজত থেকে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট পরিচালিত পুলিশবাহিনীর সঙ্গে চন্দননগরে এক সশস্ত্র সংঘর্ষে আহত হয়ে তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবন্যাদুর্গতদের নিয়ে সেল্ফিবাজি বন্ধ করা হোক