এস আলম গ্রুপের সঙ্গে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই

দাবি দক্ষিণ জেলা বিএনপির সুফিয়ান ও এনামের

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

এস আলম গ্রুপের সঙ্গে নিজেদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম। একইসঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধানে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক ওয়্যারহাউস থেকে এস আলমের গাড়ি বের হওয়ার যে সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে তা সঠিক নয় বলেও দাবি করেছেন তারা। এই দুই বিএনপি নেতার দাবি, মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালামের কাছ থেকে বিএনপি পরিচয়ে চাঁদা চাওয়ার খবর পেয়ে তারা কালুরঘাট শিল্প এলাকায় মীর গ্রুপের পেপার মিলে যান। সেখানেও তাদের তত্ত্বাবধানে এস আলম গ্রুপের কোনো গাড়ি বের হয়নি। এছাড়া ওই কারখানায় এস আলমের কোনো গাড়ি ছিল কিনা তার জবাব কেবল মীর গ্রুপের মালিক বা স্টাফদের কাছে রয়েছে বলেও জানান তারা।

গতকাল শনিবার দুপুরে দোস্ত বিল্ডিংস্থ দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবু সুফিয়ান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এনামুল হক এনাম।

উল্লেখ্য, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের মেয়ের শ্বশুর হচ্ছেন মীর গ্রুপের আবদুস সালাম। তিনি আবার এনামুল হকের মামাতো ভাই। একটি ওয়্যারহাউসের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল দামি গাড়ি সরিয়ে নেয়ার একটি ভিডিও গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওর স্থানটি কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকার এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ওয়্যারহাউসের বলে দাবি করেন অনেকে। এছাড়া গুঞ্জন রয়েছে সরিয়ে নেয়া গাড়িগুলো এস আলম গ্রুপের। আবু সুফিয়ান ও এনামুল হক এনাম উপস্থিত থেকে গাড়ি সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি তদারকি করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৯ আগস্ট কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রপের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে কে বা কারা প্রথমে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তীতে বিএনপির নাম দিয়ে টাকা চাঁদা দাবি করছে বলে এনামুল হক এনামকে অবহিত করেন। যদি চাঁদা না দেয় তাহলে মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাবে বলেও হুমকি দেয়। তাই মীর গ্রুপের পক্ষ সহযোগিতা কামনা করেন। বিএনপির নাম দিয়ে ফোন করার ঘটনা অবহিত হওয়ার পর এনামুল হক দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে আবু সুফিয়ানকে জানান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে কালুরঘাট মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে যাই এবং চাঁদাবাজদের হুমকির ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করি। সেদিন বিএনপি নামধারী চাঁদাবাজরা দুপুর ১টা থেকে ৩টা এবং পরবর্তীতে বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে চাঁদা দিতে হবে বলে ০১৯৭৪৩৪৫৩২৪ নাম্বার মোবাইল ফোন থেকে বারবার হুমকি দিতে থাকে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে বিএনপির নাম ব্যবহার করা চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতেই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিট মত অবস্থান করে মীর গ্রুপের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করি এবং বিএনপি নাম দিয়ে কেউ যদি কোন ধরনের চাঁদা দাবি করে, তাহলে তাদেরকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আমরা চলে আসি। মূল ঘটনা হলো এটা। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রচার করেছে আমরা নাকি কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জ্যারটেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের ওয়্যার হাউজে গিয়েছিলাম। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এসময় এক প্রশ্নের জবাবে এনামুল হক এনাম বলেন, বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং সাংগঠনিকভাবে হেয় করার জন্য মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে। আমরা মইজ্জ্যারটেক এস আলম এর ওয়্যারহাউসে যাইনি। আমরা কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করার জন্য গিয়েছি। এস আলম এর বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তিনি বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধানে গাড়ি গেছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা চাঁদার কথা শুনে গেছি, এখন কার গাড়ি আসছে, বের হচ্ছে সেটা তাদের ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) ব্যাপার। এই গাড়ি কারা রেখেছে বা রাখেনি সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের সামনে ১০১৪টা গাড়ি বের হয়েছে সেটা ঠিক না, আমার সামনে দুয়েকটা গাড়ি আসাযাওয়া করেছে। আমরাও তো গাড়ি নিয়ে গেছি।

এনামুল হক বলেন, ওনাদের (মীর গ্রুপে) ফ্যাক্টরিতে যদি এস আলমের কোনো গাড়ি রাখে তার জবাব ফ্যাক্টরির মালিক বা স্টাফরা দিতে পারবে। আমরা জবাব দিতে পারব না। আমরা তো গাড়ির জন্য যাইনি। আপনারা ফ্যাক্টরির মালিক বা স্টাফদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা যখন মীর গ্রুপের কাগজ ফ্যাক্টরিতে যাই, আমি অফিসের ভেতরে ছিলাম। একটা ফ্যাক্টরিতে কত গাড়ি আসছেযাচ্ছে, সেগুলো এস আলমের গাড়ি কীনা বা তাদের কীনা সেটা আমাদের জানার কোনো সুযোগ ছিল না।

মীর গ্রুপের চেয়ারম্যানকে অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে চাঁদা দাবি করা হল, আর সেটা শুনেই ছুটে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করতে বললে আবু সুফিয়ান বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, যদি বিএনপির নামে কোথাও কেউ চাঁদাবাজি করে বা অবৈধ কর্মে লিপ্ত হয় তার বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নিতে না পারি তাহলে ওল্টো আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু এখানে প্রথমে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বললেও পরে বিএনপির নামে চাঁদা চাওয়ার কথা বলে তখন আমরা ছুটে যাই।

আবু সুফিয়ান বলেন, যদি ওনাদের (মীর গ্রুপ) ফ্যাক্টরিতে এস আলমের কোনো গাড়ি থাকে সেগুলো বের করার জন্য আমাদের তত্ত্বাবধান কেন দরকার হবে? এটা তো কমন সেন্সের বিষয়। গাড়ি কখন আসছে, গেছে, যেতে পারে এটা ওনাদের বিষয়।

এক প্রশ্নের জবাবে সুফিয়ান বলেন, যারা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তাদের যথার্থ বিচার চাই আমরা। তাদের শেল্টার দেয়া কোনো সুযোগ বিএনপির নেই। এস আলমের সাথে আমাদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এম মামুন মিয়া। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম হোসাইনী, লায়ন নাজমুল মোস্তফা আমিন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাড. ফৌজুল আমিন, মফজল আহমদ চৌধুরী, নূরুল ইসলাম সওদাগর, ভিপি মোজাম্মেল (আনোয়ারা), মেজবা উদ্দিন চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ রফিক, হাজী মো. ইসহাক চৌধুরী, মঈনুল আলম ছোটন, শফিকুল ইসলাম শফিক, বিএনপি নেতা মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, রেজাউল করিম নেছার, মাস্টার মোহাম্মদ লোকমান, রেজাউল করিম রেজা, গাজী আবু তাহের, মোর্শেদুল শফি হিরু, সাইফুদ্দিন আহমেদ তৌহিদুল আলম, আবদুল মাবুদ, শামশুল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসিন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবি ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফিরোজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন ও তার ভাই অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধজামায়াতের নিবন্ধন : আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন আজ