২৭ দিন ধরে আইসিইউতে হাসান ছাত্র আন্দোলন

মাঝে মাঝে কোমা থেকে জাগে, কথা বলে না, চোখ খুলে তাকায় : হাসানের মা

ইমাম ইমু | রবিবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ

৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন মো. হাসান (২২) নামে এক যুবক। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়। ২৭ দিন ধরে আইসিইউতেই আছেন হাসান। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন হাসানের মা মাহেনুর বেগম।

মো. হাসান হালিশহর গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর পারিবারিক টানাপোড়েনে গ্যারেজে কাজ শুরু করেন। ছোট্ট বয়সে ২০০৮ সালে এক দুর্ঘটনায় হাসান তার বাবাকে হারান। তখন ছোট বোনের বয়স সাত মাস। তার মা পেশায় গার্মেন্টসকর্মী। ছোট দুই বোন ও হাসানকে লালনপালন করেছেন তার মা। একা সংসার সামলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন হাসানের মা। ৪ আগস্ট আন্দোলনে যোগ দেন হাসান ও তার বন্ধু শহিদুল ইসলাম সৈকত। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শহিদুল ইসলাম সৈকত আজাদীকে বলেন, ৪ আগস্ট পূর্বঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিই আমরা দুই বন্ধু। দুপুর ২টার দিকে আমাদের অবস্থান ছিল টাইগারপাসের সিআরবি রোডে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়। এক পাশে পুলিশ, অপর পাশে আওয়ামী লীগের লোকজন অবস্থান করছিল। পুলিশ তখন টিয়ারশেল ছুড়ে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় যখন পুরোটা অন্ধকার তখন অপর দিক থেকে গুলি এসে লাগে হাসানের মাথায়। গুলি এক পাশে লেগে অপর পাশে বেরিয়ে যায়। তখন আমি তাকে সেখান থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

তিনি বলেন, হাসান আইসিইউতে থাকার শুরু থেকেই আমি তার সাথে ছিলাম। অনেকে সহযোগিতা করছে। ঢাকা থেকে সমন্বয়ক সারজিস ভাই এসেছেন। আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনও সহযোগিতা করেছে। ডাক্তার বলেছেন গুলি লেগে হাসানের মাথা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু মগজও বেরিয়ে গেছে। হাসপাতালে অভ্যন্তরীণ যাবতীয় খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করছে।

একমাত্র ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে দিশেহারা হাসানের মা মাহেনুর বেগম। তিনি আজাদীকে বলেন, এখন শুধু আল্লাহকে ডাকছি। জানি না এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারব কিনা। ১৬ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে যে কষ্ট পেয়েছি, সেটা তিন সন্তানকে দিয়ে লাঘব করার চেষ্টা করেছি। এখন আবার সেই কষ্ট।

তিনি বলেন, ছেলেটাকে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়েছি। গত বছর ছোট্ট একটা কাজে যোগ দিয়েছে। আমি এতদিন চাকরি করেছি, মেয়েরা বড় হয়েছে। ভাবছি এবার অবসর নেব। এখন এই অবস্থায় আমি দিশেহারা।

ডাক্তারের বরাত দিয়ে মাহেনুর বেগম বলেন, ২৭ দিন ধরে হাসান কোমায় আছে। মাঝে মাঝে কোমা থেকে জাগে, কিন্তু কোনো কথা বলে না। শুধু চোখ খুলে তাকায়।

চট্টগ্রামের আরেক কিশোর ইয়াশ শরীফ খান (১৭) ছাত্রজনতার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ এক সঙ্গীকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। ইয়াশ এখন কাউকে চিনতে পারছেন না। বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সদ্য এসএসসি পাস ইয়াশ ভর্তি হয়েছিলেন নগরের ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজে। খেলতে যাওয়ার কথা বলে ১৮ জুলাই যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে। ইয়াশের অবস্থার অবনতি হলে ৩১ জুলাই তাকে চমেকের আইসিইউতে নেওয়া হয়। ২ জুলাই পায়ের অপারেশন হয়। কিন্তু পরদিন থেকে স্মৃতি লোপ পেতে থাকে। বর্তমানে তিনি কাউকে চিনতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন স্বজন ও চিকিৎসকরা। অবস্থার আরও অবনতি হলে ২৮ আগস্ট ইয়াশকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়য়। ১০ জুন ইয়াশের মায়ের মৃত্যু এবং এক মাসের ব্যবধানে ইয়াশের গুলিবিদ্ধ হওয়া তাদের পুরো পরিবারকে এলোমেলো করে দিয়েছে।

ইয়াশের বাবা এজাজ খান বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন, গুলির আঘাতে ইয়াশের নার্ভ সিস্টেমে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে তারা আশা করছেন, সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব হলে ছেলেটা বাঁচবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধবাইক আরোহী বাবা-মেয়ের মৃত্যু