জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম

তাওহীদুল ইসলাম নূরী | শনিবার , ৩১ আগস্ট, ২০২৪ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

এক ভাই জানায় যে, প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে দুইতলার একটি বাসার ছাদে তার বোন আটকে আছে। সাথে বোনটার তিন মেয়ে। তিন মেয়ের দুই মেয়েই বিবাহ উপযুক্ত। তাদের কোনো ভাই নেই, বাবা প্রবাসী। অর্থাৎ ওদের বাসায় কোনো পুরুষই নেই। তখন সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিই যে তাদের আনতে যেতে হবে। শক্ত মনোবল ছাড়া আর কিছুই ছিল না তখন। কারণ, স্পীডবোট, নৌকা সেদিন কিছুরই দেখা মিলে নি। একটু পর পর কলার ভেলা এবং ড্রামের ভেলাই চোখে পড়ছিল। এখন আসি মূল কথায়…..

আমরা কোমর পরিমাণ পানি পার করে বুক পরিমাণ পানিতে হাঁটা শুরু করি। প্রায় দশ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে দেখি, যে ভাইয়ের বোনকে উদ্ধার করতে যাচ্ছিলাম তিনি হঠাৎ ঠাঁই হারিয়ে ফেলে হাবুডুবু খেতে খেতে রাস্তার বামপাশে একটা গাছ ধরে আছেন। তার একটু পরেই আমি দেখি পানির গ্রোত অনান্য জায়গার তুলনায় ঐ স্থানটিতে বেড়ে গেছে। তখন আমি পিছনে থাকা এক লোকের সাহায্য চাইলে তিনি নিজেও স্রোতের সাথে পেরে উঠতে পারছিলেন না। তিনি আমাকে রাস্তার ডানপাশে থাকা একটা গাছ নির্দেশ করে সেটা আঁকড়ে ধরতে বললে আমি গাছটাতে ঠাঁই নিই। ঠাঁই নেয়ার সাথে সাথে দেখি গাছটিতে নাম না জানা অসংখ্য পোকা আমাকে একের পর এক দংশন করে যাচ্ছে। কিন্তু, সময়ের কাছে মানুষ যে বড় নিরুপায়, বড় বেশি অসহায়! কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের দুইজন ভাই এসে আমাকে এক গাছ থেকে আরেক গাছে যেতে বলে। আমি তাই করি। পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় তারা সকলে পায়ে থাকা বুট জুতা এবং মোজা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল পানিতেই। অন্য একটি গাছে যাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের একটা ভাই আমার জন্য একটা স্পিডবোট/নৌকা নিয়ে আসার আশ্বাস দিয়ে চলে যায়। আমি একাকী বসে বসে তখন জীবনের হিসাব কষি। জীবনের আশা এক প্রকার ছেড়ে কলেমায়ে তাইয়্যেবাহ এবং বিভিন্ন দোয়া পড়তে থাকি। জীবনের হিসাব কষতে কষতে দেখি চারটি ড্রামের একটি ভেলা নিয়ে কিছু লোক এগিয়ে আসে। লোকগুলো আমাকে জানায় যে ফায়ার সার্ভিসের ভাইটিই এটা পাঠিয়েছেন। আমি অনেক কষ্টে পানিতে ঠাঁই পাওয়া পর্যন্ত ঐ ভেলা ধরে এগিয়ে যাই। আবার হাঁটা শুরু করি কোমর পানিতে। ঐ যে গাছের অসংখ্য পোকা সেদিন জামা খোলার আগ পর্যন্তই দংশন আর বিড়বিড় করছিল। ফায়ার সার্ভিসের লোক দুটি না থাকলে হয়তআমি কৃতজ্ঞ ফায়ার সার্ভিসের ভাই দুটির কাছে। শোকরিয়া মহান মালিকের দরবারে। ফিরে যাই ঐ বোনটির কাছে, উদ্ধার করি তাদের। ঐদিন আমরা আর সামনে না গিয়ে বাড়ি চলে আসি। আল্লাহ সকল বানবাসী মানুষের সহায় হোন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফুটপাত দখলমুক্ত করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধবন্যার আপদই যেন গড়ে দিল সম্প্রীতির অনন্য নজির