ওয়্যারহাউস থেকে বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি সরিয়ে নেয়ার ভিডিও ভাইরাল

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভিডিওর স্থানটি মইজ্জারটেক এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউসের উপস্থিত বিএনপি নেতাদের দাবি, কালুরঘাট মীর গ্রুপের পেপার মিলের

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩১ আগস্ট, ২০২৪ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

একটি ওয়্যারহাউসের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল দামি গাড়ি সরিয়ে নেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, ভিডিওর স্থানটি কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক এলাকার এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ওয়্যারহাউসের। সরিয়ে নেয়া গাড়িগুলো এস আলম গ্রুপের। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম উপস্থিত থেকে গাড়ি সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি তদারকি করেন বলেও দাাবি করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

অবশ্য আবু সুফিয়ান ও এনামুল হকের দাবি, তারা এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউসে যাননি। ভিডিও’র স্থানটি মীর গ্রুপের কালুরঘাট পেপার মিলের ভেতর। মীর গ্রুপের আবদুস সালামের কাছ থেকে দুর্বৃত্তরা চাঁদা দাবি করার খবর পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় সেখানে যান তারা।

উল্লেখ্য, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের মেয়ের শ্বশুর মীর গ্রুপের আবদুস সালাম। তিনি আবার এনামুল হক এনামের মামাতো ভাই। এদিকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিও’তে এনামুল হক এনামকে দেখা গেলেও আবু সুফিয়ানকে দেখা যায়নি। তবে সুফিয়ানের ড্রাইভার মনসুরকে দেখা গেছে। এছাড়া পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়নকে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে আবু সুফিয়ান আজাদীকে বলেন, ‘আমি কোনো ওয়্যারহাউসে যাইনি। মীর গ্রুপের আবদুস সালামকে কারা যেন ফোন করে চাঁদা দাবি করে। তিনি এনামুল হক এনামের মামাতো ভাই। চাঁদার বিষয়টি সমাধানের জন্য এনামের অনুরোধে সন্ধ্যায় আবদুস সালামের কালুরঘাট পেপার মিলে যাই। ২০ মিনিট মত ছিলাম সেখানে। যে মোবাইল থেকে ফোন করে সেটি বন্ধ পাই।’ আবু সুফিয়ান আরো বলেন, গাড়ি সরানোর জন্য আমাকে কেন যেতে হবে। সব ষড়যন্ত্র। দলের কেউ কেউ এ ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকতে পারে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন আজাদীকে বলেন, ওইদিন বিকেলে চাক্তাইয়ে আমাদের প্রোগ্রাম ছিল। এর মধ্যে এনাম ভাইয়ের কাছে খবর আসে তার মামাতো ভাই আবদুস সালামের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে চাঁদা দাবি করার কথা। তখন আবদুস সালাম কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় তাদের পাল্প পেপার মিলের কারখানায় ছিলেন। এনাম ভাই ওনাকে পরামর্শ দেন, বন্যা দুর্গতদের জন্য কেউ চাঁদা চাইলে খাতুনগঞ্জের অফিসে এসে নিয়ে যাবে, তাই যেন চাঁদা না দেয়। পরে ওনার কাছে বিএনপি পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে। তখন আমরাসহ এনাম ভাই ওখানে মুভ করেন। যেহেতু ওটা সুফিয়ান ভাইয়ের এলাকা তাই সুফিয়ান ভাইকে অবগত করা হয়। সুফিয়ান ভাইও যান। এখানে এস আলমের গাড়ির কোনো বিষয় ছিল না।

আবু সুফিয়ানের গাড়ির চালক মনসুর আজাদীকে বলেন, ‘ওখানে কারা যেন চাঁদা চেয়েছে, তাই বস (আবু সুফিয়ান) সেখানে গেছেন। এনাম ভাই ফোন করে তার মামাতো ভাইয়ের কাছে চাঁদা চাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। যে নম্বর থেকে ফোন করে চাঁদা চাওয়া হয় নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেলে বস চলে আসেন।’

এ বিষয়ে জানানোর জন্য পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলুর মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এদিকে আমাদের পটিয়া প্রতিনিধি জানান, আবু সুফিয়ানের ড্রাইভার মনসুর গাড়ি বের করার বিষয়টি তদারকি করছিলেন। গাড়িগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারেননি। তবে তারা জেনেছেন, গাড়িগুলো সীতাকুণ্ডের দিকে গেছে। কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় ছিল সেটা তারা জানতে পারেননি।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী আজাদীকে জানান, অন্তত ১৫ জনের একটি দল এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউসের সামনে আসে। একই সময়ে আরও তিনটি গাড়ি সেখানে পৌঁছায়। সেখান থেকে একে একে নামেন এনামুল হক এনাম, অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কিছুক্ষণ পরই আমরা বুঝতে পারি শুরুর দিকে আসা ১৫ জনের পুরো দলটিই ছিল মূলত ড্রাইভার। কারণ তাদের একেকজনকে একেকটি গাড়ির চালকের আসনে বসানো হচ্ছিল। এভাবে আমরা অন্তত ১৪টি গাড়ি নিয়ে যেতে দেখেছি।

প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিলাসবহুল গাড়িগুলোর সবকটি বের হওয়ার পরই এনামসহ বাকি সব নেতা ওয়্যারহাউসের সামনে থেকে সরে যান।

ঘটনার ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, শুধু গাড়ি নয়। গাড়িগুলোর ভেতরে কিছু একটা ছিল। আমাদের ধারণা, সেখানে বিপুল অংকের টাকা ছিল। শুধু গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সেখানে সশরীরে আসার কথা নয়।

এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম বলেন, ছবি বা ভিডিও ফুটেজগুলো মইজ্জ্যারটেক এস আলম ওয়্যারহাউজের নয়। যে গাড়িগুলোর ছবি দেখা যাছে, সেগুলো মীর গ্রুপ ও আমাদের ব্যবহৃত গাড়ি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক রূপ দিতে বাধা ‘জমি জটিলতা’
পরবর্তী নিবন্ধপ্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে