আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এতদিন লড়াই করেছি : ফখরুল

| বৃহস্পতিবার , ২৯ আগস্ট, ২০২৪ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচনের দাবি করায় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আসা কটাক্ষ ও সমালোচনার জবাব দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ‘বিরাজনীতিকরণের’ চেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন। এখন নির্বাচনের দাবি জনগণ মেনে নেবে না বলে জামায়াতের পক্ষ থেকে আসা বক্তব্যের বিপরীতে তিনি বলেছেন, যারা ভোটে জিততে পারবে না, সরকার চালাতে পারবে না, তারা এসব কথা বলে। গতকাল বুধবার দুপুরে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের করা মন্তব্যের জবাব দেন। খবর বিডিনিউজের।

বিএনপির ‘নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন জিকির জনগণ মেনে নেবে না’ বলে জামায়াত প্রধানের বক্তব্যের জবাব দিয়ে ফখরুল বলেন, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে এরা সরকার চালাতে পারবে, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তাভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের লড়াইটা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সেটার জন্যই তো নির্বাচন। এটা তো আমাদের অধিকার। আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এতদিন লড়াই করেছি, সংগ্রাম করে এসেছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এখনও একএগারোর কথা ভুলে যাইনি। তাই আবার যখন ওই চেহারাগুলো সামনে আসে, তখন যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়, প্রশ্ন এসে যায়। সেজন্য আমরা একটা আলোচনার কথা বলেছি, পারস্পরিক আলোচনা দরকার। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মত ‘বিরাজনীতিকরণের’ লক্ষণ দেখছেন কি নাএই প্রশ্নেও জামায়াতের আমিরকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমি লক্ষণ দেখছি না, সতর্ক করছি। কিছু ফেইস দেখলে আমরা ভয় পাই। আপনারাও দেখেছেন। কোনো দিন দেখিনি হঠাৎ করে মিডিয়ার ফ্রন্ট পেজে চলে আসছে তার বক্তব্য, তাদের থিওরি এগুলো আপনারা প্রচার করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার কী চায়, জনগণ কী চায়, এটা নিয়ে আলোচনা হতে হবে মন্তব্য নির্বাচন প্রশ্নে আবার সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘অতি দ্রুত’ সংলাপের দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। এটাই (সংলাপ) আমরা বলেছি, খুব জোর দিয়ে বলেছি। আজকে আবারও বললাম দ্রুত আলোচনা প্রয়োজন। না হলে হবে কী? অনেক ভুলবোঝাবুঝি তৈরি হয়। সব কিছু তো পাবলিকলি হয় না। অনেক সময়ে আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে।

১৯৯৯ সাল থেকে জোটবদ্ধ বিএনপি ও জামায়াতের জোট ২০২২ সালে ভেঙে যায় বলে সে বছরের অক্টোবরে একটি রুকন সম্মেলনে প্রকাশ করেন শফিকুর রহমান। পরে ৯ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল স্বীকার করেন, তারা ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়েছেন। তবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যোগাযোগ সব সময়ই ছিল, যুগপৎ কর্মসূচিও দিয়েছে দুই দল।

তিনি বলেন, নির্বাচন ওনাদের (বিএনপি) লাগেও তো না, যেখানে যা দখল করা, ফুটপাত থেকে ফকিরের বাণিজ্য পর্যন্ত সব ওনারা নিয়ে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে যা সাজিয়েছিল, তার ৮০ শতাংশ ওনাদের দখলে ইতিমধ্যে চলে গেছে। বাকি ২০ ভাগ বাকি আছে। আর কী করবে সরকারে গেলে? সরকার তো হয়েই গেছে। জামায়াত আমিরের এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ফখরুল বলেন, বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু দুর্বৃত্ত দখলবাজি করে তা বিএনপির ওপরে চাপানোর চেষ্টা করছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই যে, কোনো রকম দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে বিএনপি বা তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত নন এটা আমরা জোর দিয়ে বলছি। আমার খুব অবাক লেগেছে নামকরা পত্রিকাগুলো, তারাও বিএনপিকে জড়িয়ে নিউজ করছেন। একজন দুই জন ব্যক্তিবর্গ যদি অপকর্ম করে সেটা তো বিএনপির দ্বারা হয় না। আমরা যখনই শুনছি তখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রায় ৫৬/৫৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।

নির্বাচন প্রশ্নে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে বাতিল করা হল, তার জন্য ওই দলগুলো মিলেই তো আমরা আন্দোলন করেছি। ওই দলগুলোর অনেকের আন্দোলনে অনেক নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। এমনকি তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই আন্দোলনকে ওই বিষয়কে বাদ দিয়ে আমি তো অন্য রাজনৈতিক চিন্তা এই মুহূর্তে করব না।

ফখরুল বলেন, মানুষ এখানে একটা ডেমোক্রেটিক সেটআপ চায়, গণতন্ত্র চায়, মানুষ নির্বাচন চায়। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। দেশের মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন তারা বলবে, ‘হ্যাঁ, নির্বাচন দরকার।’ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ীরা তারা মনে করছে যে, ব্যবসার জন্য শিল্পের উন্নতির জন্য, অর্থনীতিকে সচল করার জন্য অতি দ্রুত একটা সক্রিয় সরকার দরকার। যত দ্রুত হবে, তত ভালো। কারণ আমদানি করবে.. তারা বলছে যে, ‘তোমাদের নির্বাচিত সরকার না থাকলে তো আমরা ব্যবসা করব না’, ইট ইজ ফ্যাক্টস। আপনারা বড় ব্যবসায়ীদের, ব্যবসায়ী লিডারদের সঙ্গে কথা বলেন এটাই বলবেন। নির্বাচন প্রশ্নে জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেছেন, জনগণ নির্বাচনেই চায়। যারা জিততে পারবে না, তারা অন্য কথা বলে। সংস্কার প্রশ্নে ফখরুল বলেন, আমরা তো সংস্কার চাই। তবে সেই সংস্কারটা অবশ্যই হতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বরাদ্দ ত্রাণ তহবিলে : ফখরুল জানান, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর যে কর্মসূচি নেওয়ার কথা ছিল, বন্যার কারণে তা কমিয়ে আনা হবে। যে অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা ছিল সেই অর্থ আমরা আমাদের দলের ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দেব, সেখান থেকে তা দুর্গত মানুষের কাছে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিনিয়র সহ-সভাপতি ও এক পরিচালকের পদত্যাগ
পরবর্তী নিবন্ধস্যার, দুই মিনিট কথা বলতে পারবো?